১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

৪৩ বছর অব্যবহৃত থাকা ট্রান্সমিটারে পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হল ভয়েজার-১

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
ভয়েজার-১ এখন পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য এমন একটি রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যবহার করছে, যা ১৯৮১ সালের পর আর ব্যবহৃত হয়নি। প্রকৌশলীরা বুঝতে চেষ্টা করছেন তাই কী ভুল হয়েছে তা প্রকৌশলীরা বোঝার চেষ্টা করছেন। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে উৎক্ষেপণ করা মহাকাশযানটি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্তি সংরক্ষণের জন্য ধীরে ধীরে কিছু উপাদান বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে ১৫ বিলিয়ন মাইল (২৫ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূর থেকে ভয়েজার-১ অনন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠাতে পারছে।
৪৭ বছর বয়সী মহাকাশযান ভয়েজার-১ এর সঙ্গে আবারো সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছে নাসা। তবে এই সংযোগ এখনো বিপদমুক্ত নয়। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই ঐতিহাসিক মিশনের সঙ্গে কয়েকদিন আগে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ভয়েজার-১ সৌরমণ্ডলের বাইরে ইন্টারস্টেলার বা আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে ভ্রমণ করছে। খবর সিএনএন।
ভয়েজার-১ এখন পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য এমন একটি রেডিও ট্রান্সমিটার ব্যবহার করছে, যা ১৯৮১ সালের পর আর ব্যবহৃত হয়নি। প্রকৌশলীরা বুঝতে চেষ্টা করছেন তাই কী ভুল হয়েছে তা প্রকৌশলীরা বোঝার চেষ্টা করছেন। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে উৎক্ষেপণ করা মহাকাশযানটি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্তি সংরক্ষণের জন্য ধীরে ধীরে কিছু উপাদান বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে ১৫ বিলিয়ন মাইল (২৫ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূর থেকে ভয়েজার-১ অনন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠাতে পারছে।
পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী মহাকাশযান হচ্ছে এই ভয়েজার-১। প্লুটোর কক্ষপথের অনেক বাইরে বিস্তৃত হেলিওস্ফিয়ার নামক সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রেরও বাইরে এখন মহাকাশযানটি। সেখান থেকে সরাসরি আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশের নমুনা সংগ্রহ করছে ভয়েজার-১। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশযানটিতে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে নতুন প্রযুক্তিগত গোলযোগ। ভয়েজার দলের সদস্যরা উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করছেন যাতে গল্প ও ইতিহাসে পরিণত হওয়া পৃথিবীর এই অভিযাত্রী অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে মহাজাগতিক যাত্রা চালিয়ে যেতে পারে।
ভয়েজার মিশন অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার ব্রুস ওয়াগনার জানান, তাদের দলের প্রকৌশলীরা মাঝেমধ্যে কিছু হিটার চালু করার নির্দেশনা পাঠান ভয়েজার-১’এ। কারণ, দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব কমাতে সাহায্য করে তাপ। নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির মিশন কন্ট্রোল থেকে ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ মহাকাশযানে বার্তা প্রেরণ করা হয়। প্রতিক্রিয়ায় ভয়েজার-১ ইঞ্জিনিয়ারিং তথ্য পাঠায়। পৃথিবী থেকে ভয়েজার-১’এ বার্তা পৌঁছাতে প্রায় ২৩ ঘণ্টা সময় লাগে।
গত ১৬ অক্টোবর হিটার চালুর কমান্ড পাঠানোর পর, মহাকাশযানটির স্বয়ংক্রিয় ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম সক্রিয় হয়। মহাকাশযানটি প্রয়োজনের বেশি শক্তি ব্যবহার করলে ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় সিস্টেমগুলো বন্ধ করে দেয় শক্তি সংরক্ষণের জন্য। ১৮ অক্টোবর ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মহাকাশযানটির প্রতিক্রিয়া সংকেত শনাক্ত করা যায়নি। সে সময় নাসার সংশ্লিষ্ট দল সর্বশেষ সমস্যাটি আবিষ্কার করে।
ভয়েজার-১ কয়েক দশক ধরে দুটি রেডিও ট্রান্সমিটারের মধ্যে একটি ব্যবহার করছে। ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সির ওপর ভিত্তি করে এটিকে এক্স-ব্যান্ড বলা হয়। অন্যদিকে, এক্স-ব্যান্ডের তুলনায় অনেক দুর্বল হওয়ায় এস-ব্যান্ড নামের অপর একটি ট্রান্সমিটার ১৯৮১ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়নি। প্রকৌশলীদের ধারণা, ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেমটি ট্রান্সমিটার থেকে ফেরত আসা ডেটার হার কমিয়ে দিয়েছে, যা ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মনিটরে ভয়েজার-১ থেকে ভাগ করা সংকেতের প্রকৃতিতেও পরিবর্তন এনেছে।
শেষ পর্যন্ত, ভয়েজার-১ দলের সদস্যরা ১৮ অক্টোবর মহাকাশযানটির প্রতিক্রিয়া শনাক্ত করতে সক্ষম হন। কিন্তু ১৯ অক্টোবর ভয়েজার ১-এর সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ভয়েজার-১ দলের ধারণা ছিল, ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেমটি হয়তো অতিরিক্তভাবে আরো দুইবার সক্রিয় হয়েছিল। এর ফলে এক্স-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার বন্ধ করে এস-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার চালু হয়, যাতে প্রয়োজন হয় কম শক্তি।
ভয়েজার-১ দল নিশ্চিত ছিল না যে, দূরত্বের কারণে দুর্বল এস-ব্যান্ড সংকেত শনাক্তযোগ্য হবে কিনা। তবে ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের প্রকৌশলীরা তা শনাক্ত করতে সক্ষম হন। ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার কারণ কী তা পরিষ্কার হওয়ার আগে দলটি এক্স-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার পুনরায় চালু করার কমান্ড পাঠানোর ঝুঁকি নেবে না। এতে এক্স-ব্যান্ড চালু করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
ওয়াগনার জানান, তার দল এক্স-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার পুনরায় চালু করতে সক্ষম হলে এমন ডেটা পাওয়া যেতে পারে যা পুরো ঘটনার কারণ প্রকাশে সক্ষম হবে।
১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে পৃথিবী ত্যাগ করে ভয়েজার-১। ‘লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ’এর সবচেয়ে বড় উদাহারণ হয়ে ৮২৫ কিলোগ্রাম ওজনের ভয়েজার-১ এখনো পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে! ভয়েজার-১ বৃহস্পতি গ্রহকে অতিক্রম করেছে ১৯৭৯ সালে। যাত্রাপথে ভয়েজারের পাঠানো ছবিতে বিশ্ববাসী দেখেছে, দানবগ্রহ বৃহস্পতির বুকে ১৮৮ বছর ধরে বয়ে চলা দানবঝড় ‘দ্য গ্রেট রেড স্পট’কে; যার আয়তন পৃথিবীর তিনগুণ।
ভয়েজার-১ শনি গ্রহ অতিক্রম করেছে ১৯৮০ সালে। বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগানের অনুরোধে ভয়েজার তার সর্বশেষ ছবিটি তুলেছিল ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সৌরজগৎকে বিদায় দিয়ে অনন্ত মহাশূণ্যের উদ্দেশে ভয়েজার-১ যখন যাত্রা করছে সে সময় পৃথিবীর একটি ছবি তুলেছিল বিশ্ববাসীর এই দূরতম ‘অন্ধকারের বন্ধু’, যে ছবি ‘পেল ব্লু ডট’ নামে বিখ্যাত।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়