ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই কিশোরদের একটি অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে তারা। প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। খবরে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে হঠাৎ করে অপরাধ বেড়েছে। পুলিশের মূল্যায়ন হচ্ছে, এর মূলে রয়েছে কিশোর-তরুণ গ্যাং। হত্যা, মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জমি দখল থেকে শুরু করে এসব অপরাধী সুযোগ পেলেই নারীদেরও উত্ত্যক্ত করছে। বিগত সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলের আগে রাজধানীতে অন্তত ১২৭টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় ছিল। সারা দেশে ছিল ২৩৭টি। এসব গ্যাংয়ের সদস্য ছিল দুই হাজারের বেশি। চট্টগ্রাম নগরীতে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ নানা অপরাধে নাম আসে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১৯ সালে কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করেছিল। সেই সময় নগরজুড়ে প্রায় ৫০টি গ্যাংয়ের অস্তিত্ব পেয়েছিল তারা। গ্যাংগুলোতে ৫৫০ জনের মতো সদস্য ছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে র্যাব জানিয়েছিল, চট্টগ্রাম নগরীতে ২৫০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় আর এগুলোতে প্রায় দেড় হাজার সদস্য আছে। রাজশাহীতে কৌশল বদলে ব্যাপকভাবে সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং। হত্যা, ছুরিকাঘাত, মাদক, ছিনতাই, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সশস্ত্র অংশগ্রহণ থেকে নারীদের যৌন হয়রানির মতো সব অপরাধই তারা করে। রংপুরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের খুনাখুনিতে কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করার ঘটনাও ঘটেছে। সিলেটে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণহীন, বেপরোয়া।কিশোর গ্যাংগুলো তৈরি হলো কেন? কেনই বা তারা এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর বয়সে হিরোইজম ভাব থাকে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে। তাদের ওপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গরিব ও ধনী দুই শ্রেণির পরিবারের কিশোরদের মধ্যেই এই গ্যাং কালচারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের ফল। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেয়। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করে। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। কিশোর গ্যাং কালচার নির্মূলে মদদদাতাদেরও ছাড় দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে।
অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং
আরো দেখুন
প্রবাসীদের অবৈধ হওয়ার শঙ্কা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি...
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে...