১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

স্বৈরাচার পতনের তিন মাস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্র্বতী সরকার। গত তিন মাসে দেশকে কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে এই সরকার? বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত তিন মাসে ভঙ্গুর সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, সংস্কার এবং দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অর্থনৈতিক দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই, উচ্চ সুদের হার, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে। এর ফলে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। আর তলানিতে এসে ঠেকেছে শিল্পোৎপাদন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাহিদার মধ্যে নানামুখী সংকটে জর্জরিত উদ্যোক্তারা।সময়মতো এলসি করতে না পারা, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে কারখানার উৎপাদন নেমেছে শূন্যের কোঠায়। কারখানায় বিক্ষোভ, হামলা-মামলার কারণে ভারী শিল্প, পোশাক ও টেক্সটাইল খাত মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।এটা ঠিক যে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে অত্যন্ত আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের প্রবাহ। সরকার পরিবর্তনের পর গত তিন মাসই ক্রমান্বয়ে বেড়েছে প্রবাস আয়ের প্রবাহ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত অক্টোবর মাসের প্রথম ২৬ দিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। আবার পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট কোনোভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।ওদিকে পাচার করা অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৩৪টি দেশের মুদ্রাপাচারের তথ্য নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন বা এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সরিয়েছেন। ব্যাংক দখল করে আনুমানিক দুই লাখ কোটি টাকা (এক হাজার ৬৭০ কোটি ডলার) বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার সময়ে দখল করা হয়েছিল এমন প্রায় ১২টি ব্যাংকের অবস্থা নিরীক্ষা করার পর বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ নেবে।এরই মধ্যে যেসব পরিবর্তন দৃশ্যমান, সেগুলোর শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সমান্তরালভাবে চলবে। গত সোমবার রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, অরাজকতার বিষবাষ্প যারা ছড়াবে, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সব অপরাধীর বিচার করা হবে। সরকারপ্রধানের এই বক্তব্যে সাধারণ মানুষ আস্থা রেখেছিল। সেই আস্থা বজায় রাখতে হবে। সরকারকে জনগণের আস্থায় থাকতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়