১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ন্যায্যতা নিশ্চিত হোক

কোটা পদ্ধতি বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে দেশে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার দাবির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে একটি অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে এই সরকারের তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এখনো রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়নি, বৈষম্যের অবসান হয়নি। এমনই দাবি করেছেন প্রশাসন ক্যাডার বাদে বিসিএসের বাকি ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনার বক্তারা। শনিবার রাজধানীর পূর্ত ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা দাবি করেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার পাশাপাশি বিসিএসের সব ক্যাডারের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনায় বক্তারা দাবি করেন, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সর্বত্র কেবল প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একাধিপত্য। এটি রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে যেমন বাধাগ্রস্ত করছে, তেমনি মেধা কাজে লাগানোর সুযোগও বন্ধ করে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব যদি চিকিৎসা ক্যাডারের কেউ হন, তিনি যেভাবে মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন, হাসপাতালের প্রয়োজন কিংবা কাজের সুবিধার্থে চিকিৎসকদের প্রয়োজন বুঝবেন, ইতিহাস বা রাজনীতি পড়ে আসা প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তার সেগুলো সেভাবে বুঝতে না পারারই কথা। একইভাবে কৃষি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম যতটা বুঝবেন, চিকিৎসা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ততটা গভীরভাবে বুঝতে পারবেন না। তাই মন্ত্রণালয়গুলোতে বিষয়ভিত্তিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি যোগ্যতম ব্যক্তির নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আবার প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নানা ক্ষেত্রে যেসব সুযোগ-সুবিধা পান, অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তার কাছাকাছি সুযোগ-সুবিধাও পান না। আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ বৈষম্যহীন, জনবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক সিভিল সার্ভিস গঠনে যেসব সুপারিশ তুলে ধরেছে, তা খুবই যৌক্তিক। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া, কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন অর্থাৎ ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’-এর বাস্তবায়ন, প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করে সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনা, পদ আপগ্রেডেশন, পদোন্নতিতে সমান সুযোগ, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস, বিভিন্ন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ইত্যাদি। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের দাবি ও সুপারিশগুলো জরুরি ভিতিতে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়