১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন

এ দেশে ছাত্ররাজনীতির সোনালি অতীত রয়েছে, প্রশংসনীয় ঐতিহ্য রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সব কিছুতেই ছাত্রদের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। শুধু নেতৃত্ব বিকাশ নয়, সাধারণ ছাত্রদের চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অনটন, সুবিধা-অসুবিধার কথা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার জন্যও একটি নির্বাচিত ছাত্রসংসদ অত্যন্ত জরুরি। অথচ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত ছাত্রসংসদ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর আর নির্বাচন হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯২ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ইউকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০১ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (রাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ বা জকসুর কোনো নির্বাচনই হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা এবং ছাত্রসংসদ চালু করা।
কিন্তু তিন মাসেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত আলোচনা ও কমিটি গঠনের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রেখেছে। আবার কেউ কেউ উপায় খুঁজতে কমিটি গঠন করেছে। অনেকটাই ঢিমে তালে এগোচ্ছে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কাজ। তবে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় তাকিয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দিকে। সেটিই স্বাভাবিক। কারণ ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-আন্দোলনসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে ডাকসুর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ডাকসু। আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাই একসময় ডাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন। এককথায় বলা যেতে পারে, দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ডাকসু। ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে রয়েছে নানা মত। সেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বদলে সংস্কারের পক্ষেই জোরালো দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল সংসদে ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে ওঠার এই সংস্কৃতি নতুন করে যে চালু হতে যাচ্ছে, তা দেশের ছাত্ররাজনীতির বিকাশে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচন অবিলম্বে দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আজকের ছাত্র নেতৃত্ব যাতে আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শুধু নেতৃত্ব বিকাশ নয়, সাধারণ ছাত্রদের চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অনটন, সুবিধা-অসুবিধার কথা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার জন্যও একটি নির্বাচিত ছাত্রসংসদ অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও পরিবর্তনের হাওয়া জোরদার হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক এবং ছাত্রসংসদগুলো তাদের পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাক, এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়