১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

আস্থার সংকট কেটে যাক

দীর্ঘদিন থেকেই দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। বৈশ্বিক নানা মেরুকরণে ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ-সব কিছুই যেন স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। আগের সরকারের অব্যাহত ভুল নীতিতে এমনিতেই দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, শিল্পের প্রসার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। পটপরিবর্তনের পর অতি উৎসাহী একটি চক্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা করে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানো হয় কয়েক দফা। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যায়। ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির পাশাপাশি ব্যবসা প্রসারেও সমস্যা দেখা দেয়। অথচ দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা ৮২ থেকে ৯০ শতাংশ। অর্থনীতিতে ব্যবসার এই অবদান যেভাবেই হোক তা টিকিয়ে রাখতে হবে। এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল থাকতে হবে। এক সম্মেলনে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা এই বলে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি, করবে না। বরং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কম্পানি বাঁচিয়ে রাখা হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। তাঁরা বলেছেন, দেশে বৈষম্য দূর করে পরিবর্তন আনতে হলে ব্যবসার সুযোগ বাড়াতে হবে। আর বিদ্যমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে স্থবির থাকা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। নীতিনির্ধারকদের এই বলে আশ্বস্ত করতে চেয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এই সরকার করবে। দীর্ঘমেয়াদিগুলো নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে। ব্যবসার পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব ও প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগের বিষয়টিও বেশ আলোচিত। ওই সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে ‘দেশের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। রিসিভার নিয়োগ দেওয়া মানে বন্ধ করা নয়। যেকোনো কম্পানি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।’ ওই সেমিনারে আলোচকরা বলেছেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের ৪০ শতাংশ বেকারের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে।’ দেশের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নতুন খাত খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। দেশে শ্রমশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটি বড় অংশই এখন বেকার। পড়াশোনা শেষ করে বছরের পর বছর চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে তারা। আজকের তরুণদের জন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। বাংলাদেশের বড় সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। আমরা সমন্বিত উন্নয়নের দিকে যেতে পারিনি। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করলেও আমরা মানবসম্পদের মানসম্পন্ন উন্নয়ন করতে পারিনি। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কর্মসংস্থান। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমাদের প্রত্যাশা, ব্যবসার ওপর থেকে বহুমুখী চাপ কমানো হবে। তাতে কেটে যাবে আস্থার সংকট।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়