বাংলাদেশের অগ্রগতিতে একটি প্রধান বাধা মুদ্রাপাচার। মুদ্রাপাচার রোধে অতীতে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আর হয়নি বলেই ক্রমাগতভাবে বেড়েছে মুদ্রাপাচার। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটি বা জিএফআইয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পাচার হয়। আর শুধু বাণিজ্যের আড়ালে নয়, অন্য অনেক উপায়েও মুদ্রা পাচার হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নিকট অতীতে দেশ থেকে অন্তত ১৭ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। দেশ থেকে মুদ্রাপাচার রোধে বেশ কিছু সংস্থা কার্যক্রম চালায়, কিন্তু তাদের ভূমিকা বা দায়িত্ব পালন নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। সেসব প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে দেশ থেকে মুদ্রাপাচারের ভয়াবহ চিত্র। সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ীসহ অনেকেরই নাম এসেছে, যারা বিপুল অঙ্কের মুদ্রাপাচারে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। মুদ্রাপাচারের অভিযোগ আগেও পাওয়া গেছে। পেগাসাস, পানাম পেপারসসহ আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিবেদনেও অনেক বাংলাদেশির নাম এসেছে। মুদ্রাপাচার রোধে নিয়োজিত সংস্থাগুলোও অনেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সেসব অভিযোগ রহস্যজনক কারণে চাপা পড়ে গেছে। ফলে মুদ্রাপাচারের অভিযোগে কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। আর শাস্তি হয়নি বলেই পাচারকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। আর তখনই পাচারের অভিযোগগুলো জোরেশোরে আলোচনায় আসতে শুরু করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কয়েক বছরের মধ্যে দুবাইয়ের সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশি ১৩৪ জন ব্যক্তি মোট ৮৪৭টি ফ্ল্যাট, ভিলাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন, যার দাম ন্যূনতম সাড়ে তিন কোটি থেকে শতকোটি টাকা পর্যন্ত। তালিকায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ অনেক পরিচিত মুখও রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় ১০টি দেশে। এগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেইমান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস। আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবদুস সোবহান গোলাপের নিউইয়র্কে ৯টি বাড়ি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামে বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ আছে আরো অনেকেরই বিরুদ্ধে। বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের তথ্য মতে, বাংলাদেশের আজিজ খান সিঙ্গাপুরেরও নাগরিক। ১.১২ বিলিয়ন ডলারের মালিকানাসহ তিনি এখন সিঙ্গাপুরের ৪১তম শীর্ষ ধনী। অথচ এই টাকা তিনি বাংলাদেশ থেকে কোনো বৈধ উপায়ে নিয়েছেন বলে তথ্য নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। তাহলে সিঙ্গাপুরে এত বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক তিনি কিভাবে হলেন, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। মুদ্রাপাচারে শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কিংবা অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হলে মুদ্রাপাচার রোধে কঠোর হতেই হবে। যত অভিযোগ আসছে, দ্রুততম সময়ে সেগুলোর তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। অন্তত কিছু পাচারকারীরও যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তাহলে পাচারের গতি রোধ হবে।
লাগামহীন মুদ্রাপাচার রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন
আরো দেখুন
প্রবাসীদের অবৈধ হওয়ার শঙ্কা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি...
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে...