দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অস্থিরতা, বিক্ষোভ, সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এসব দমনে কিংবা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ব্যর্থতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর মাতুয়াইলে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিভর্তি একটি ম্যাগাজিন চুরি হয়েছে বলে সূত্রাপুর থানায় আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর আগে ২০ নভেম্বর মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা চিকিৎসকের অবহেলায় তাদের এক সহপাঠী মারা যাওয়ার অভিযোগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব হামলায় একজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এর আগে ২০ নভেম্বর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একই ধরনের সংঘর্ষ হয় গত রবিবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায়ও অনেক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। শুধু শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নয়, কয়েক দিন ধরে রাজধানীর অনেক রাস্তাঘাট প্রায় অচল করে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও মালিকরা। উচ্চ আদালত থেকে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার কারণে তারা এই বিক্ষোভ শুরু করে। সোমবারও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চার ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ভিত্তিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এক মাসের জন্য হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও আন্দোলনরত চালকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে থেমে থেমে চলছে শ্রমিক অসন্তোষ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা। অন্যদিকে ইসলামবিদ্বেষী, ভারতীয় আগ্রাসন এবং পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিছু স্থানে পত্রিকা পোড়ানোসহ বিলবোর্ড ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজারসংলগ্ন প্রথম আলো পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিক্ষোভকারীরা। আগের দিনও সেখানে একই রকম কর্মসূচি চলে। এ সময় প্রথম আলোর কার্যালয় ঘিরে নিরাপত্তায় ছিলেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হতেই পারে। কিন্তু তা নিয়ে এভাবে নিজেরা সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়া মোটেও কাম্য নয়। এ ধরনের অসহিষ্ণুতা শিক্ষার ঘাটতিকেই প্রকাশ করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করতে হবে। প্রতিটি ঘটনা শুরুতেই সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে, যাতে তা ক্ষয়ক্ষতি ও জনদুর্ভোগের কারণ না হয়। সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলোকেও রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকতে হবে।