প্রতিদিনের ডেস্ক॥
বাসায় মেহমান এসেছে, তাই সকাল-সকাল রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে এসেছেন গার্মেন্টস কর্মী রাজু আহমেদ। কিনেছেন দুটি ব্রয়লার মুরগি। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগির দামও অনেক বেশি আর দেশি মুরগিতো আমাদের মতো গরিব মানুষের কাছে বিলাসিতা। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে রাজু আহমেদের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে। এছাড়া লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা, সোনালি, পাকিস্তানি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিম্ন আয়সহ সাধারণ ক্রেতাদের মাংসের চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি। এটিও এখন ভরসা হারাচ্ছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। এছাড়া সোনালি, লেয়ার, কক জাতের মুরগিগুলো আগে থেকেই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে এসব মুরগি। এছাড়া ৬০০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি মুরগি সাধারণ কেউ কিনে খেতে পারেন না।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে মুরগি কিনতে এসে হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেসরকারি একটি চাকরি করি। বেতন দিয়ে পুরো মাস চলাই কঠিন হয়ে গেছে। বাজার খরচই অতিরিক্ত খরচ হয়ে যাচ্ছে। একটা ব্রয়লার মুরগি কিনতেই ৩৫০/৪০০ টাকা লেগে যাচ্ছে। তাও এটা সবচেয়ে কম দামের মুরগি। আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা ব্রয়লার ছাড়া অন্য কোনো মুরগি কিনতেই পারি না। এক বছরের বেশি হবে দেশি মুরগি কিনতে পারি না। আগে মাঝে মাঝে সোনালি মুরগি কিনতাম এখন এর দামও অতিরিক্ত। আজকের বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি বাজারে আরেক ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম আরও বেশি ছিল, এখন তাও কিছুটা কমে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্য সব ধরনের মুরগি অতিরিক্ত দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিং বা দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিক্রেতারা যে যার মতো করে যেমন ইচ্ছে দামে মুরগি বিক্রি করছেন। যে কারণে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা ব্রয়লার ছাড়া অন্যান্য মুরগি কেনার ক্ষমতা হারিয়েছি।
রামপুরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, আগের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে এখন প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালি, কক, লেয়ার, দেশি মুরগির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে। মূলত মুরগির ফিডের দাম অনেক বেশি, যে কারণে খামারিদের মুরগি উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। ব্রয়লার মুরগি ছাড়া অন্যান্য মুরগি বাজারের সরবরাহ তুলনামূলক কম।রাজধানী উত্তর বাড্ডা বাজারের আরেক মুরগি বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, মূলত তখন থেকেই মুরগির দাম বেড়েছে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কম থাকলেও অন্যান্য মুরগির পাইকারি বাজারে কেনা বেশি পড়ছে।