চৌগাছা সংবাদদাতা
যশোরের চৌগাছা পৌর শহরে ছাদে আদা চাষ করে সাবেক স্বাস্থ্য সহকারি সুজা উদ্দীন (৭৬) ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তিনি পৌর শহরের আম্রকানন পাড়ায় নিজ বাসায় বসবাস করেন। সাবেক এ সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুজা উদ্দীন সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। দশ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর পেয়েছেন। তিনি বাড়ীর ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও সখেরবসে বাগান পরিচর্যা অভ্যস্ত। সম্প্রতি তিনি ইউটিউব দেখে পরীক্ষামুলকভাবে গতবছর নিজের দুইতলা ভবনের ছাদে কয়েকটি ছোট ক্যারেটে দেশি জাতের আদার কন্দ রোপন করেন। এতে তিনি ভালো ফলন পান। চলতি বছরে মোট ৫১ টি ক্যারেটে আদা চাষ করেছেন সুজাউদ্দীন। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গেলে, সাবেক স্বাস্থ্য সহকারি সুজা উদ্দীন জানান, এ আদা চাষে তার অল্প খরচ হলেও দেড়শ কেজি আদা উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। তার এমন উপায়ে আদা চাষ দেখে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। এ সময় দেখা যায় বাড়ির ছাদে থরে থরে সাজানো রয়েছে ক্যারেট, বস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের টব। সবুজ সতেজ চারা গুলো দোল খাচ্ছে মৃদ মন্দ বাতাসে। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানায়, স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় উপজেলার গ্রামীণ কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে আদা চাষে। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তা, ক্যারেটে কিংবা টবে মাটি ভরে আদা চাষ বাড়ছে। সারা বছরের সব সময় মসলা ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে সুজাউদ্দীনের আদা চাষ পদ্ধতি অনুকরণিয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন তারা। আদা চাষী সুজা উদ্দীন জানান, সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরে বাড়িতে বসে একেবারে সময় কাটতে চায়না। অলস সময়ে মোবাইলে আদা চাষ দেখে উৎসাহ পান তিনি। প্রতি ক্যারেটে মাটি সংগ্রহ সহ অন্যান্য সকল কাজ নিজেই করেছেন। এর জন্য বাড়তি কোনো লেবার খরচ করতে হয়নি তার। তিনি জানান বাড়ির রান্নাঘরের উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে নিজেই তৈরি করেন জৈব সার। এই জৈব সার প্রয়োগ করে তিনি আদা চাষ করছেন। এর পরেও খাদ্যের ঘাটতি হলে সামান্য পরিমানে রাসায়নিক সার পানিতে মিশ্রন তৈরি করে দিলে উপকার হয়। সুজা উদ্দীনের গাছগুলো তরতাজা এবং সতেজ রয়েছে। বাড়ির ছাদ ছাড়াও সামনের আঙিনায় সারি সারি ক্যারেট বসিয়ে আদা চাষ কারর কথা ভাবছেন তিনি। জুন মাসে আদার কন্দ রোপন করেন তিনি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আর কয়েক মাসের মধ্যে ২শ ৫০ কেজির অধিক আদা পাবেন। যা পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে মোটা অংকের টাকায় বিক্রিও করতে পারবেন তিনি। উপজেলা কৃষি বিভাগ তার উৎপাদিত সকল আদা বীজ হিসেবে কিনে নেবেন বলে তিনি জানান। তার সাদ বাগানে মরিচ, টমেটা, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক, সিম ও লাউ ইত্যাদি সবজি রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, আমি নিজে সুজা উদ্দীনের ব্যতিক্রমী আদা চাষ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়ায় ব্যতিক্রমী আদা চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রয়োজন হলে আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করবো। বর্তমানে তার আদার চারাগুলো বেশ ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, বস্তা বা ক্যারেটে আদা চাষ করলে অনেক সুবিধা। মাটিতে আদা চাষ করলে অনেকসময় কন্দপঁচা রোগে আক্রান্ত হয়। এতে একটিতে হলে পুরো জমি নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করলে কোন কারণে একটি হলে শুধুমাত্র সেটি সরিয়ে নিলেই বাকি আবাদ ভালো থাকে। বস্তা বা ক্যারেটে আদা চাষে কীটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব।