১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ত্রুটিমুক্ত ও জোরদার করুন

দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমানো যাচ্ছে না। মানুষের আয় বাড়ছে না। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। বহু মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে কিংবা আয় কমে যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা ক্রমেই বাড়ছে। নিম্নমধ্যবিত্ত বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে রক্ষায় রাষ্ট্রের জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) বা ‘সর্বজনীন ন্যূনতম আয়’ নামে একটি সমন্বিত সুরক্ষা কর্মসূচির প্রস্তাব করেছে। আয়বৈষম্য কমিয়ে দেশে খানাপ্রতি জীবনযাপনের ব্যয় ও দারিদ্র্যের হার হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উৎপাদন গতিশীল করতে এই প্রস্তাব করা হয়। গত রবিবার এক সেমিনারে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান—এগুলো মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে আসার পরও মানুষের সেই মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা যায়নি। এখনো দেশে এমন অনেক পরিবার রয়েছে, সারা দিনে যাদের এক বেলা আহার জোটে না। মানসম্মত বা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তো জোটেই না। এমন প্রেক্ষাপটে সিপিডির উপস্থাপিত ইউবিআইয়ের প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নাগরিক হিসেবে আমাদের ন্যূনতম আয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ন্যায্য অধিকার আমাদের দিতে হবে। কিভাবে সেটি নিশ্চিত হবে, তা নীতিনির্ধারকরা ঠিক করবেন।’ সিপিডি বলেছে, নতুন এই পদ্ধতিতে দেশের প্রতি উপযোগী পরিবার জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম একটি আয় (অর্থ সহায়তা) রাষ্ট্র থেকে পাবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা গেলে জাতীয়ভাবে দারিদ্র্যের হার ৬.১৩ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় আগামী বাজেট থেকেই স্বল্প বা বিস্তৃত পরিসরে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সেমিনারে বলা হয়েছে, জাতীয়ভাবে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চাইলে এক বছরে সরকারের ৭৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা লাগবে। অতিদারিদ্র্যপ্রবণ ১১ জেলায় এটি বাস্তবায়ন করলে ১৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যা দেশের মোট বাজেটের ১.৮৭ শতাংশ। যে দেশ থেকে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়, প্রকল্পের নামে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে লুটপাট চলে, সে দেশে এই পরিমাণ অর্থ মোটেও বড় কোনো অঙ্ক নয়। আমরা আশা করি, দ্রুত এমন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ত্রুটি দূর করতে হবে এবং সেসবের সুবিধা যাতে প্রকৃত দরিদ্ররা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়