১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

আসছে দুর্নীতির শ্বেতপত্র

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে দেশে দুর্নীতির যে বিস্তার ঘটেছিল, তা ছিল নজিরবিহীন। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে লাগামহীন দুর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি। সেই সীমাহীন দুর্নীতির কিছু চিত্র প্রকাশ পেতে যাচ্ছে শ্বেতপত্রে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতির ক্ষত ও পরিস্থিতি পরিমাপ করতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, সেই কমিটি এরই মধ্যে ৪০০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এখন চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের কিছু কাজ। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হবে এবং এর পরের দিন অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর প্রতিবেদনের বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন ও দুর্নীতিতে দেশের অর্থনীতির চরম বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা সরকারের সচিব, ব্যবসায়ী, নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে তিন মাস আলোচনা, পর্যালোচনা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর এসংক্রান্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না পেলেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে যত দূর জানা গেছে, তাতে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের লুটপাট ও দুর্নীতির ভয়ংকর সব চিত্র। প্রতিবেদনে কেবল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটপাটের ফিরিস্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে এই খাতটিতে যে লুটপাট হয়েছে, তা দিয়ে আরো তিন-চারটি পদ্মা সেতু করা যেত। সেই হিসাবে ১৫ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেই এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। জানা যায়, প্রতিবেদনে মোট ২৪টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত থাকছে দুর্নীতির বর্ণনা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সরকার পরিচালনা পদ্ধতিই ছিল দুর্নীতি সহায়ক। এতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে সরকার যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, সেই পদ্ধতিই দুর্নীতি ও অনিয়মকে উৎসাহিত করেছে এবং সে কারণে এত বেশি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। নিকট অতীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা গবেষণায় বাংলাদেশের সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হলো আফগানিস্তান এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সে সময় সরকার সেগুলোকে প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে। তবে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যে শ্বেতপত্র প্রণীত হয়েছে, তাকে তো অস্বীকার করা যাবে না। আমরা চাই, দুর্নীতির ঘটনাগুলো বিচারের আওতায় আসুক এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়