প্রতিদিনের ডেস্ক:
ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর আশায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা প্রকাশ্যে ও গোপনে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরছেন। এগুলোর মূল ভিত্তি হিসেবে রয়েছে, ইউক্রেনের বড় একটি অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য উঠে এসেছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে। রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মনোনীত রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়ক নতুন প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলোগসহ তিনজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার প্রস্তাবগুলোতে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। তার একটি হলো ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি বিবেচনারও বাইরে রাখার প্রস্তাব।এছাড়া কূটনৈতিক সমাধানে যাওয়ার জন্য মস্কো ও কিয়েভকে চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন উপদেষ্টারা। আলোচনায় রাজি না হলে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দেওয়া ও পুতিনকে ইউক্রেনে সহায়তা বাড়ানোর হুমকি দেওয়ার মতো প্রস্তাবও করেছেন তারা।ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার বলেছেন, ২০ জানুয়ারি তার শপথ গ্রহণের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই প্রায় তিন বছর পুরোনো সংঘাতের সমাধান করবেন। তবে পরিকল্পনার ছিটেফোঁটার আভাসও তিনি এখনও দেননি।অবশ্য সংঘাতের পেছনে অনেক জটিলতা থাকায় ট্রাম্পের জন্য এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তবে উপদেষ্টাদের বক্তব্য থেকে ট্রাম্পের সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনার কিছু আভাস পাওয়া যায়।এদিকে, সেনা সংকটে থাকা ও নিয়মিত বিভিন্ন অঞ্চলের দখল হারিয়ে দিশেহারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনার বিষয়ে সুর কিছুটা নরম করেছেন। ন্যাটো সদস্যপদ পেতে এখনও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের দখল হওয়া কিছু অংশ কূটনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধার করার পথ খুঁজতে হবে।কিন্তু বিশ্লেষক ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনায় বসতে রাজি হওয়ার কোনও বাস্তবসম্মত কারণ নেই পুতিনের। কারণ ইতোমধ্যে দুর্বল অবস্থানে থাকা ইউক্রেনে সামনে আরও আক্রমণের সুযোগ পেতে পারেন তিনি।রাশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা বিশ্লেষক ইউজিন রুমার বলেছেন, পুতিনের কোনও তাড়া নেই। ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের স্বপ্ন ত্যাগ ও দখলকৃত চারটি প্রদেশ রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার মতো শর্ত থেকে সরে আসার বা নমনীয়তা দেখানোরও ইঙ্গিত দেননি তিনি। রুমার আরও মনে করেন, পুতিন ধীরে ধীরে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন ও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছিল, বর্তমানে সামরিকভাবে দখলকৃত সীমারেখা স্বীকৃতি দিলে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য প্রস্তুত পুতিন। তবে কিয়েভ ও পশ্চিমারা এতে সমর্থন না জানালে যুদ্ধ চালিয়ে যেতেও তাদের কোনও সমস্যা নেই। রাশিয়া ইতোমধ্যেই ২০১৪ সালে একতরফাভাবে দখল করা ক্রিমিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেখেছে। এছাড়া, ডনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ, জাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এখন ক্রেমলিনের হাতে।