বর্তমান পৃথিবীতে দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রচুর জনবল রয়েছে, কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। যুগের প্রয়োজনে কিংবা প্রযুক্তি ও শিল্পের প্রয়োজনে যে ধরনের জনবল দরকার, প্রচলিত শিক্ষায় তার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তাই সরকার দক্ষ জনবল সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে হাত দিয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানানসই দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্কিল ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রগ্রাম (এসআইসিআইপি) নামের প্রকল্পটি চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আড়াই লাখের বেশি দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও এখন আর কায়িক শ্রমের তেমন চাহিদা নেই। সবাই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক চায়। দক্ষ শ্রমিকের পারিশ্রমিকও অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষ শ্রমিকের জোগান দিতে পারলে বাংলাদেশ কয়েক গুণ বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারত। গৃহীত প্রকল্পে বিভিন্ন খাতের দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত। এতে এক লাখ ৫৩ হাজার জনকে দক্ষতাভিত্তিক কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নারী ও পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর ৫৫ হাজার ৫০০ জনকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ২০ হাজার জনকে। এ ছাড়া শিল্পের উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে ৯ হাজার ২৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পের ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে দুই হাজার ৮৯৫ জনকে এবং ২৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিককে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশনসহ দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশে বেকার তরুণ-যুবকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, অথচ আমাদের শিল্প খাতে প্রচুর বিদেশি কাজ করছে। এর কারণ আমাদের তরুণদের মধ্যে নির্দিষ্ট দক্ষতার অভাব। আশা করি, বর্তমান উদ্যোগটি সেই অভাব পূরণে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এ ধরনের আরো উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্প মালিকদেরও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

