এম এ রহিম, চৌগাছা
যশোরের চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর সরকারি বাওড় দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অনন্ত ১০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপির একটি পক্ষ বাওড়ে মাছ ধরতে যায়। এতে অন্য একটি পক্ষ বাধা দিলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোটর সাইকেল একরাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছেন চৌগাছা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় চৌগাছা থানায় অস্ত্র ও মারামারির আইনে দুটি মামলা হয়েছে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা হলেন পৌর শহরের হুদপাড়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলাম(৩২), মডেলপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে শাহিদুল ইসলাম (৩১), চাদপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (৩২), বিশ্বাসপাড়া গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে উজ্জল হোসেন (৪০), কুটিপাড়া গ্রামের মৃত মশিয়ার রহমানের ছেলে গোলাম মোস্তফা (৬৪), কারিগরপাড়া গ্রামের তাইজুল ইসলামের ছেলে আব্দুস সামাদ (৫৬) ও যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের জহুর আলী ছেলে বিএনপি নেতা কালাম হোসেন (৫৭)। আহতদের মধ্যে কালাম হোসেনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। শরিফুল ইসলামসহবাকী ৬ জন চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। বাকিরা চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানায় যায়, উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর সরকারি বাওড়টি উপজেলা মৎসজীবী লীগের সভাপতি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরকারি ইজারার মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছিল। ৫ আগষ্টের পরে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সালাহউদ্দীন ও চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিমকে ২০% লাভ্য অংশ প্রদান করা শর্তে মাছ চাষ করছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। সম্প্রতি আবুল কাশেম যশোর জেলা বিএনপি নেতা কালাম হোসেনের কাছে বাওড়ের ২০% শেয়ার বিক্রি করে দেন। শুক্রবার কালাম হোসেনের নেতৃত্বে চৌগাছা উপজেলা বিএনপির এক পক্ষের ২০/২৫ জন নেতা-কর্মীকে সাথে নিয়ে মাছ ধরতে যায়। এতে সালাউদ্দীন ও আব্দুর রহিমের লোকজন বাধা দেয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অনন্ত ১০ জন আহত হয়।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছান চৌগাছা থানা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুই পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও ভারসন টু এফজেট যার রিজিঃ নং যশোর-ল ১৫২৩৪৪ ও পালসার ১৫০ সিসি যার রেজিঃ নং যশোর-ল ১৫-৬৩৯০ দুটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করেন। স্থানীয়দের সহযোগীতায় আহতদের উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোবাইল ফোনে জানান, ৫ আগষ্ট এর পরে মাছ লুট হয়ে যাচ্ছিল। বাওড়ের মাছ টিকিয়ে রাখতে প্রথমে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সালাউদ্দীন ও চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিমকে একটি চুক্তির মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য বাওড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে বাওড় সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি যশোরের বিএনপি নেতা কালাম হেসেনের কাছে বাওড়ের ২০% শেয়ার ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, বাওড়ের যারা অঘটন ঘটিয়েছে তাদের ব্যক্তিগত ব্যপার। দল এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের সাপোর্ট করবে না। তিনি আরো বলেন, যারা অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে জেলায় জানানো হবে। দল তাদের ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেবেন। কারণ একজন ব্যক্তির জন্য দলের বদনাম মেনে নেওয়া হবেনা। চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, বাওড়ের মাছ ধরা কে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোটর সাইকেল ও একরাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় চৌগাছা থানায় অস্ত্র ও মারামারির আইনে দুটি মামলা হয়েছে।