বিনিয়োগকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে ধরা হয়। বিনিয়োগ ব্যক্তি খাতে যেমন হতে পারে, তেমনি হয় রাষ্ট্রীয় খাতে। যেকোনো দেশের অগ্রগতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বরাবরই বেসরকারি বিনিয়োগ, বেসরকারি ব্যবসা-শিল্প বিশেষ অবদান রেখে এসেছে। সাম্প্রতিক বাস্তবতা হচ্ছে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিক্রি হ্রাস, সুদের উচ্চ হার, শ্রম অসন্তোষ, পরিবহন ও কারিগরি সমস্যা, ডলার সংকটে কাঁচামালের ঘাটতি, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও আকস্মিক বন্যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে ব্যক্তি খাতে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কিছু কম্পানির ব্যবসা করার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বেড়েছে সুদের হার। উচ্চ সুদের হারে বিনিয়োগ স্থবিরতা প্রকট হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে টানা অস্থিরতা, বিক্ষোভ, সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
বাংলাদেশে অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক খারাপ হচ্ছে। দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে বহুমুখী সংকট সামনে আনছেন ব্যবসায়ীরা।
অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটা নেতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এগুলোকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একদিকে যেমন বেশ কিছু শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে, আবার সম্ভাবনাময় অনেক শিল্প-কারখানাও অর্থাভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আবার অর্থায়ন সংকট, ঋণ সহায়তা, সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ জানাচ্ছেন। ডলার সংকট, দফায় দফায় কর কাঠামোর পরিবর্তন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট, উচ্চ সুদের হারসহ আরো নানা সমস্যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সংকট কোনোভাবেই কাটছে না। ব্যবসার পরিবেশটাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বিনিয়োগ প্রসারের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। ব্যবসার জন্য কিছু শর্ত পূরণ প্রয়োজন। প্রথমত উপযোগী পরিবেশ লাগবে। ব্যবসার আবহের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। সার্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সে দেশের অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা কেমন—এটা বিবেচ্য বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দু-তিন বছরে অর্থনীতি যে পরিমাণ অবনমিত হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যতটা খারাপ অবস্থায় গেছে, সেটা টেনে তুলতে সময় লাগবে। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যে খাতে অতিদ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে সেটি হচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এ খাতের স্বাভাবিক অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়টি। কাজেই এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নিরাপদ করবে। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ এখনো ফেরেনি। ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আমাদের প্রত্যাশা, বিদ্যমান সব বাধা দূর করে ব্যবসার পরিবেশ নিরাপদ করা হবে। ব্যবসা সহজ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।