প্রতিদিনের ডেস্ক॥
ভারতের বিরাট কোহলি, ইংল্যান্ডের জো রুট, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ আর নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন। ক্রিকেট বিশ্বে তাদের পরিচয়টা ফ্যাবুলাস ফোর নামে। সংক্ষেপে ফ্যাব ফোর। বিগত এক যুগ ধরে নিজেদের প্রমাণ করেছেন প্রতিভা থেকে বিষ্ময়ের চূড়া পর্যন্ত। লির ব্যাটে চড়ে ওয়ানডে ক্রিকেট দেখেছে অবিশ্বাস্য সব রেকর্ড। টেস্টে মনোযোগী হয়ে জো রুট ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাটেই হয়ে উঠছেন সর্বকালের সেরাদের একজন। স্টিভ স্মিথের হাতে অস্ট্রেলিয়ার গৌরবময় টেস্ট ইতিহাসের অদলবদল ঘটছে প্রতিনিয়ত। আর নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজ দেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটার হিসেবে। কারো ফর্মের ঘাটতি ঘটেছে, কারো বছর গিয়েছে মন্দ। স্টিভ স্মিথ প্রায় তিন বছর ধরে ছিলেন সেঞ্চুরিখরায়। আবার ৮১ ইনিংস তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার না দেখার আক্ষেপে পুড়েছেন কোহলিও। কিন্তু, ফ্যাবুলাস ফোরের কেউই নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি সময়ের এই দীর্ঘ পরিক্রমায়। বরং ক্যারিয়ার সায়াহ্নে প্রত্যেকেই একেকজন কিংবদন্তির পর্যায়ে। কিন্তু ফ্যাবুলাস ফোরের এই ধারণা এলো কোথা থেকে? উত্তরটা খুঁজতে গিয়ে ফিরতে হচ্ছে প্রায় ১১ বছর আগে। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি মার্টিন ক্রোর কাছ থেকে আসে এই ফ্যাব ফোরের ধারণা। রুট, স্মিথ, কোহলি আর উইলয়ামসনের প্রত্যেকেই তখন নিজেদের নাম কেবল প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটে। তখনই মার্টিন ক্রো বলেছিলেন, পরের দশ বছর ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করবেন তারা, ‘চারজনেরই একইরকমের প্রতিভা, মেধা, রানের নেশা এবং দায়িত্ববোধ রয়েছে। এদের প্রত্যেকেই ভবিষ্যতে নিজ নিজ দেশের অধিনায়ক হবে। কয়েক বছরের মধ্যেই এরা সবাই নিজেদের ফর্মের চূড়ায় যাবে। আর তারপরেই শুরু হবে এক দুর্দান্ত লড়াই যেটা নির্ধারণ করবে কে হবে বিশ্বের ১ নাম্বার ব্যাটার।’ মার্টিন ক্রোর সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছে সেটা অনায়াসে বলা চলে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসের শীর্ষ ২০ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন ৪ জনেই। এরমাঝে জো রুটের অবস্থান সর্বকালের তালিকায় ৫ম স্থানে। ওয়ানডেতে অবশ্য এককভাবে অনেকটা এগিয়ে কোহলি। সর্বকালের তালিকায় আছেন ৩য় স্থানে। চারজনের মধ্যে প্রত্যেকেই অন্তত এক ফরম্যাটে জয় করেছেন বিশ্বসেরার মুকুট। বিরাট কোহলি ২০১১ সালের বিশ্বকাপ এবং ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা দলের সদস্য। জো রুট ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়ার অন্যতম নায়ক। ২০২১ সালে প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন।
আর চারজনের মধ্যে সবচেয়ে সফল অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ। ২০১৫ ও ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৩ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করেছেন এই ব্যাটার। এর বাইরে কোহলি ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছেন। ইংল্যান্ড ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করলেও সেই স্কোয়াডে ছিলেন না জো রুট। তবে এই চারজনের ফর্মের তুঙ্গে থাকার ক্ষণটি হয়ত পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেননি মার্টিন ক্রো। ২০১৬ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরপারে চলে যান কিউই এই কিংবদন্তি। বেলায় বেলায় ফ্যাব ফোরের চারজনেরও ক্রিকেটকে বিদায় বলার সময় প্রায় চলেই এসেছে। প্রত্যেকেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন বিদায়। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়ত শেষ আইসিসি আসর যেখানে তাদের চারজনকেই একত্রে দেখা যাবে। সাদা বলের ক্রিকেটকে একপ্রকার বিদায় বলেই দিয়েছেন রুট। কোহলিও শেষ দেখছেন নিজের ক্যারিয়ারের। উইলিয়ামসন আর স্মিথের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রায় ১ যুগ আগে শুরু হওয়া ফ্যাব ফোরের অসামান্য লড়াইয়ের শেষ মঞ্চ হয়ত আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।