প্রতিদিনের ডেস্ক॥
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে ছিল বড় আলোচনা। অবশেষে চলতি মাসেই আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে ছাত্রদের সেই দল। তবে দল ঘোষণার আগেই মূল নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। এ নিয়ে রোববার দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব থাকতে দেখা যায় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের। এরফলে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান-নতুন দলে আহ্বায়ক নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে মূলত সদস্য সচিবের পদ নিয়ে। আহ্বায়ক পদে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নিচ্ছেন তা একরকম চূড়ান্ত। কিন্তু সদস্য সচিব পদে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছেন না ছাত্ররা। এ নিয়ে জোর প্রতিযোগিতা চলছে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের মধ্যে। সূত্রগুলো জানায়, দ্বিতীয় শীর্ষ পদটিতে আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া কয়েকটি পক্ষ। এতে বেশি এগিয়ে আছেন ছাত্রশিবিরের রাজনীতি থেকে আসা ছাত্রনেতারা। এতে বাঁধ সাধছেন বাম ও মধ্যপন্থি ধারার ছাত্রনেতারা। জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতা বলেন, আন্দোলনের আগে-পরে শিবির থেকে যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন, তারা নতুন দলের নেতৃত্বে প্রভাব ধরে রাখতে চান। তাদের দাবি, নতুন দলের শীর্ষ পর্যায়ের পদ। শিবির থেকে আসা ছাত্রনেতাদের যুক্তি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তাদের ভুমিকা বেশি ছিল। এখন তাদের জনবল বেশি। বাম ও নিরপেক্ষ ছাত্রনেতারা মনে করেন, শিবিরের রাজনীতি করা ছাত্রনেতাদের নতুন দলের নেতৃত্বে রাখলে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কারণ, সাধারণ মানুষ এমনিতেই ভাবছে জামায়াত-শিবির আমাদের নতুন দল গঠনে সহায়তা করছে। এদিকে রোববার দিনভর আখতার হোসেনকে সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করতে দেখা গেছে। যেসব পোস্টে আখতারের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা স্মরণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী তার জোরালো লড়াই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আখতার হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। অন্যদিকে মতবিরোধের কথা স্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে মতানৈক্য থাকায় নিজেদের মধ্যে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। একটি পক্ষ নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার এক ধরনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম চূড়ান্ত হতে পারে চলতি সপ্তাহে। আর এ মাসের শেষ সপ্তাহে দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নাহিদ ইসলাম নতুন দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে বা তার পরের সপ্তাহে সরকার থেকে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকছেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তারা এখনই নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন না।