প্রতিদিনের ডেস্ক
পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ থাকার উদাহরণ তাঁর নিজের জীবন থেকেই দেখাতে পারেন রোহিত শর্মা। ভারত অধিনায়ক তা দেখালেনও, ‘২০১৯ বিশ্বকাপেও প্রচুর অবদান রেখেছিলাম আমি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন তো আর হতে পারিনি।’ ব্যাট হাতে নতুন ইতিহাস গড়েও নয়। এক ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচ-পাঁচটি সেঞ্চুরি করে বিরল রেকর্ড গড়া এই ব্যাটার সেবার আসরের সর্বোচ্চ রান (৬৪৮) সংগ্রাহকও ছিলেন। অথচ সেরা ব্যাটারের দলকে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল সেমিফাইনাল থেকে। কখনো কখনো তুঙ্গে থেকেও এমন হারানোর হাহাকারে বুক ভারী হয় বলেই হয়তো ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি তাঁর আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন ‘সেঞ্চুরি ইজ নট ইনাফ’। যথেষ্ট করেও ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রতিদান পাননি রোহিত। তবে সেই ঘটনা আবার শেখার নতুন জানালাও খুলে দিয়েছিল তাঁর জন্য। এই ওপেনার মনোভাব বদলে নিজেকে ‘হিটম্যান’ করে তোলার প্রতিও মনোযোগী হয়েছিলেন, যিনি কিনা শুরুর ঝড়ে প্রতিপক্ষের বোলিংকে ছারখার করে দিয়ে দলের জন্য অবাধ রানের ছন্দটা ধরে দিতে চান। খেলতে চান তেমন কার্যকর ইনিংস, যেটি সেঞ্চুরির চেয়েও অমূল্য হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে রোহিতের ৮৩ বলে খেলা ৭৬ রানের ইনিংস সে রকমই একটি। মাত্র ৪১ বলে ফিফটির তথ্য এই ইনিংসটির মহিমা আরো ভালোভাবে বোঝাতে সক্ষম। ট্রফি নিয়ে গত পরশু রাতের সংবাদ সম্মেলনে এসে ছোট ইনিংসেরও বড় গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলছিলেন, ‘এমনকি ৩০-৪০ রান করে ম্যাচ জেতালেও সেটি আপনাকে অনেক বেশি সন্তুষ্টি ও আনন্দ দেবে।’ জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষায় রোহিত এমন আনন্দেই ডুব দিয়ে চলেছেন, ‘ফাইনালে আমি ভিন্ন কিছুই করিনি। কয়েক বছর ধরে যা করে আসছি, তা-ই করেছি। তা ছাড়া এখানে (দুবাইতে) ১০ ওভারের পর ফিল্ডিং ছড়িয়ে গেলে এবং স্পিনাররা আক্রমণে এসে গেলে রান করা মুশকিল হয়ে যায়। উইকেটও মন্থর হতে থাকে। আমি তাই প্রথম ১০ ওভারেই সুযোগ নিতে চেয়েছি, যাতে পরের দিকের ব্যাটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারে।’ পাওয়ার প্লেতেই ১০ মাসের মধ্যে আইসিসির প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ট্রফির পথ খুলে দেন রোহিত। গত ১৬ মাসের মধ্যে ট্রফির সংখ্যা অবশ্য তিনও হতে পারত। কিন্তু ঘরের মাঠে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে স্তব্ধ রোহিতদের জন্য ওই আসরটি বিশাল এক ‘শিক্ষা সফর’ ছিল, যে আসরে ভারত শেষ পর্যন্ত ভ্রমণের ভোগেই গিয়েছিল কি না, আছে সে আলোচনাও। বাড়তি ভ্রমণের ধকলের কারণে ২০২৩-এর ভারত আর ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নিউজিল্যান্ডের মধ্যে মিল খোঁজা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কারণ কিউইরা এই আসরে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা দল। সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণের ক্লান্তি ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে তাদের প্রাণশক্তির অনেকটা শুষে নিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। একই অনুমান ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের ভারতকে ঘিরে। যারা নিজেদের মাটিতে রাউন্ড রবিন লিগের ৯টি ম্যাচ খেলেছে ৯টি ভিন্ন ভেন্যুতে। এর আগে-পরে দুটি ওয়ার্ম আপ ম্যাচ এবং সেমিফাইনাল-ফাইনাল যোগ করে ১৩ ম্যাচের জন্য ১৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে হয়েছিল রোহিতদের। প্রতি তিন দিনে একটি ফ্লাইট ধরা ক্রিকেটারদের এই ধকল থেকে মুক্তি দেওয়ার উপায়ও এরপর বের করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। কম ঘুরিয়ে ক্রিকেটারদের ঝরঝরে রাখার এই ভাবনা থেকে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারতের ভ্রমণসূচি সীমিত রাখার চেষ্টা ছিল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তো একদমই ভ্রমণের কোনো ব্যাপার ছিল না। দুবাইতে কেবল হোটেল থেকে যাওয়া-আসা করে খেলা ভারতীয় দল এখানকার উইকেটের সঙ্গেও বেশ ধাতস্থ হয়ে গিয়েছিল। রোহিতও তাই ঠিক করে ফেলেছিলেন যে ফাইনালে যা করার, প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই তা করে ফেলতে হবে। ভারতের নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনাও আছে। তবে রোহিত দেখাতে চাইলেন ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকে নেওয়া শিক্ষার সুফল, ‘দারুণ ৯টি ম্যাচ খেলার পর ফাইনালে আমরা হেরে যাই। খুব বেশি রানও আমরা করিনি। আবার ৪০ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেটও ফেলে দিই। কিন্তু পরে আর উইকেটই নিতে পারছিলাম না। এ কারণেই আমরা হেরে যাই। ওই ম্যাচ থেকে আমরা এটিও শিখেছি যে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ১০০ ওভারই ম্যাচে থাকতে হবে।’ সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে রোহিতরা ম্যাচে থেকেছেন। আবার স্বস্তিতে খেলার জন্য এড়িয়ে চলেছেন ভ্রমণও।

