অপূর্ব মৃন্ময়
যশোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়, তার স্ত্রী নিয়তি রানী রায়, দুই ছেলে রাজীব কুমার রায় এবং সজিব কুমার রায়ের চারটি ফ্ল্যাট, দুটি বাড়ি, ৬০টি দোকান সহ ৭৯ দশমিক ৬২ বিঘা জমি জব্দ ও ১৩৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরআগে গত ২৭ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রনজিত পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুদকের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন। রনজিত রায়, তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছেলে রাজীবের স্ত্রী ঋষিতা সাহা ও সজীবের স্ত্রী অনিন্দিতা মালাকারের মোট ১৩৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে মোট ২ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬০ টাকা রয়েছে। দুদকের পক্ষে সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. সাজিদ-উর-রোমান এসব স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। এসব হিসাবে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭২ টাকা রয়েছে। আবেদনে বলা হয়, রনজিত কুমার রায়, মিসেস নিয়তি রায়, তাদের সন্তান রাজীব কুমার রায় ও সজিব কুমার রায়ের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত ধারায় অপরাধ করাসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার প্রয়োজন। তাদের স্থাবর সম্পদসমূহ ক্রোক করা না হলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জব্দ হওয়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, যশোর সদরে ১৩৫৬ বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট ও নিউমার্কেটের পাশে ১২২৪ বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট, চার ও তিন তলা ভবনের দুটি বাড়ি। যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ৬ হাজার ৬ বর্গফুটের নির্মাণাধীন ৬০টি দোকানসহ ৭৯ দশমিক ৬২ বিঘা জমি। এসব জমির মধ্যে রনজিত কুমারের রয়েছে ৩১ দশমিক ৪৮ বিঘা, স্ত্রীর ১ দশমিক ৭৫ বিঘা ও তাদের সন্তানদের রয়েছে ৪৬ দশমিক ৩৯ বিঘা জমি। এসব মোট দলিল মূল্য ১৭ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৫০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রণজিত কুমারের ২৫ হিসাবে আছে ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৮ টাকা, স্ত্রীর ২১ হিসাবে ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬ টাকা, তাদের সন্তান রাজীব কুমারের ৪৪ হিসাবের ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৬০২ টাকা, রাজীবের নিয়তি প্রোপাইটরের ৬ হিসাবে আছে ৯০ হাজার ৩০৫ টাকা, নিয়তি ট্রেডে আছে ১৪ হাজার ৩০১ টাকা, রাজীবের স্ত্রী রিশিতা সাহার ২০টি হিসাবে আছে ৪০ লাখ ৭ হাজার ৯৮৪ টাকা, রণজিতের ছেলে সজীব কুমারের ১২ হিসাবে আছে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৪ টাকা, সজীবের স্ত্রী অনিন্দিতা মালাকার পিউর অ্যাকাউন্টে আছে ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৫২ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, এই আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এমডি সাজিদ উর রোমান। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব নির্দেশ দেন। যেসব স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-রনজিত কুমারের যশোরের নির্বাচনী এলাকার ১১২৮ শতাংশ জমি (মূল্য ১ কোটি ৯৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা), তাঁর দুই ছেলে রাজিব কুমার রায় ও সজীব কুমার রায়ের ১৩০৯ শতাংশ জমি (মূল্য ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা), স্ত্রী নিয়তি রানী রায়ের রাজধানীর মিরপুরের দুটি ফ্ল্যাট, যশোরের দুটি বাড়ি ও ৩৮ শতাংশ জমি (মোট মূল্য ১ কোটি ৯৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা), রাজিবের দুটি ফ্ল্যাট, সজীবের একটি ফ্ল্যাট ও যশোরের মথুরা বাজারে নির্মাণাধীন সাতটি দোকান। এছাড়া রনজিত, তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছেলে রাজীবের স্ত্রী ঋষিতা সাহা ও সজীবের স্ত্রী অনিন্দিতা মালাকারের মোট ১৩৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে মোট ২ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬০ টাকা রয়েছে।

