৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

স্বাধীনতার ৫৫তম বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি শ্যামনগরে ২৮ টি শহীদ পরিবারের

উৎপল মণ্ডল,শ্যামনগর
আমরা তো এ দেশের নাগরিক না, আমাদের পিতারা এই দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন অথচ স্বাধীনতার ৫৫ তম বছর অতিবাহিত হলেও কোন স্বীকৃতি মেলেনি” তাহলে আমাদের বাবারা কাদের জন্য জীবন দিয়েছেন? এদেশে জীবন দিয়ে সনদ পাওয়া যায় না তবে টাকা দিয়ে ঠিকই সনদ পাওয়া যায়, এমনি মন্তব্য করেন ১৯৭১সালের ১৪ই এপ্রিল সোমবার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া আবু দাউদ গাজীর ছেলে আইয়ুব আলী। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বীকৃতি মেলেনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর ও সিংহড়তলী গ্রামের ২৮টি শহীদ পরিবারের। শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্বরনাপন্ন হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কয়েক বার তদন্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ বিগত সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম এসে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। গতানুগতিক ধারায় কর্মকর্তারা পরিদর্শন শেষে চলে যান। তদারকি ও যোগাযোগের অভাবে শেষমেষ সবকিছুই অধরাই রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। শহীদ হাজারী লাল মন্ডলের ছেলে যতিন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, আমাদের মত হতভাগা আর যেন কেউ না হয়। একই স্থানে ২৮ জন মানুষকে হত্যা করল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অথচ আমরা তার স্বীকৃতি পেলাম না। এটা আমাদের জন্য নয়, দেশের জন্য লজ্জা জনক। শহীদ বারী সানা ছেলে রাশেদ বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও কোন নিদর্শন নেই। সরকারি ভাবে নির্মিত হয়নি স্মৃতি ফলক। দুঃখের বিষয় হল দেশের জন্য জীবন দিয়েও এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি জোটেনি আমাদের কপালে।সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে শহীদ গুণধর ছেলে বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, যে দিন খানসেনাদের হাতে বাবা শহীদ হয়েছেন সেদিন থেকে সব হারিয়েছি এখন চাওয়া পাওয়া কিছু নেই শুধু তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক।শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন বলেন, হরিনগর যে একটা বধ্যভূমি আছে এটা আমি প্রথম শুনলাম। যদি এ ধরনের কোন বিষয় থেকে থাকে তাহলে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি অবহিতকরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।প্রসঙ্গত ১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল সোমবার সকাল ৮টার দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গান বোর্ড হরিনগর এসে পৌঁছায়। সাড়ে নয়টার দিকে হরিনগর ও সিংহড়তলী গ্রামে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। দুটি গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে ৩৩ জন নিরপরাধ মানুষকে ধরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তাদেরকে আইবুড়ী নদীর চরে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। পাকবাহিনীর নির্মমতার শিকার হন ২৮ জন নিরপরাধ মুক্তি কামি মানুষ। সেখানেই নির্মমতার শেষ নয় মৃতদের পার্শ্ববর্তী আই বুড়ি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ঐদিনের হামলায় নিহতরা হলেন, হরিনগর গ্রামের খগেন্দ্রনাথ মন্ডল, নিলশ্বর মন্ডল, জিতেন্দ্র নাথ মন্ডল, অজিত মন্ডল, সুরেন্দ্রনাথ মন্ডল, খগেন্দ্রনাথ মন্ডল, রামেশ্বর মন্ডল, কালিপদ মন্ডল, কার্তিক চন্দ্র মন্ডল, হরেন্দ্রনাথ মন্ডল, মহাদেব মন্ডল, ডাক্তার বিহারীলাল মন্ডল, অধীর মন্ডল, অধর মন্ডল, বিপিন মন্ডল, মহাদেব মন্ডল, মহাদেব মন্ডল, অধীর মন্ডল, অধীর মন্ডল, সুরেন্দ্রনাথ মন্ডল, দাউদ গাজী, হাতেম গাজী, আদম গাজী, সৈয়দ গাজী, বিপিন পাঠনি, আব্দুল বারী সানা, কৃষ্ণপদ গায়েন ও ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান ৫জন তারা হলেন, গিরেন মন্ডল, বাবুরাম মন্ডল, মনোরঞ্জন মন্ডল, বৈষ্ণব মন্ডল ও সূর্যকান্ত মন্ডল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একই স্থানে এতগুলো মানুষের প্রাণহানির একটি স্মৃতিফলক নির্মিত হোক এমনটাই প্রত্যাশা এই উপকূলের মানুষের।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়