শরণখোলা প্রতিনিধি
টানা ছয় দিন পর নিভেছে সুন্দরবনের আগুন। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১২টায় অগ্নিনির্বাপণ অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ জানায়, প্রাথমিকভাবে আগুনে টেপার বিল ও শাপলার বিলের দুই স্থানে প্রায় ৬ একর বনভূমির গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে পোড়া বনভূমির সঠিক পরিমাপ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সুন্দরবনে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত ২২ মার্চ (শনিবার) পূর্ব সুন্দরবনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিলে। বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা মিলে দুই দিন চেষ্টার পর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু এরই মধ্যে ২৪ মার্চ (সোমবার) সকালে টেপার বিল থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে ধানসাগর টহল ফাঁড়ির শাপলার বিলের তেইশের ছিলা আগুন জ্বলে ওঠে। পর পর দুটি স্থানের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় অগ্নিনির্বাপণকারীদের। বনের ভোলা নদী ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হওয়ায় তাতে জোয়ারের সময় ছাড়া একদমই পানি থাকে না। রাতের জোয়ারের অপেক্ষায় থেকে বনের আগুন নেভাতে সারা রাত জেগে পানি দিতে হয়েছে। অন্ধকার, পানির সংকট চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। অবশেষে ৬ দিন ধরে নিরলস প্রচেষ্টায় পুরোপুরি নিভেছে বনের আগুন। খুলনা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবু বক্কর জামান বলেন, ‘পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগেছে। ফায়ার ফাইটার, বনকর্মীসহ শত শত মানুষ টানা ৬ দিন ধরে দিনরাত সুন্দরবনের গহিনে প্রতিকূল পরিবেশে আগুন নির্বাপণের কাজ করতে হয়েছে। কখনো ৬টি কখনো ১০টি ইউনিটের ফায়ার ফাইটাররা কাজ করেছেন। নদীর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে আগুনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখে কাজ করতে হয়েছে। খেয়ে না খেয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।
সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সংরক্ষিত বনের আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি আমরা।’ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ‘৬ দিনের চেষ্টায় সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’ ডিএফও নুরুল করিম বলেন, ‘জিপিএসের মাধ্যমে পরিমাপ করে দেখা যায়, আগুনে কলমতেজী টেপার বিলে দেড় একর ও ধানসাগর শাপলার বিলের তেইশের ছিলায় ৪ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি শুক্রবার (২৮ মার্চ) থেকে তাদের তদন্তকাজ শুরু করবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’