১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

শুল্কযুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব

বৈশ্বিক পর্যায়ে রীতিমতো শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রশাসন নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। এর বিপরীতে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্কযুদ্ধ বিশ্ববাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে। অনেক অর্থনীতিবিদ এ কারণে ব্যাপক আকারে বৈশ্বিক মন্দা শুরুরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশও এই শুল্কযুদ্ধের বড় শিকার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যেও একই পরিমাণ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। এরই জের ধরে চীনা পণ্যের ওপর আরো ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করা হচ্ছে। বুধবার থেকেই এটি কার্যকর হবে। এদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ কখনোই মেনে নেবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীন মামলাও করেছে। একইভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও। পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে ইউরোপের ২৭টি দেশ। এভাবে পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের ফলে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জানা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে মোট ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমজীবী সরাসরি জড়িত। তাই অনেকে আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি ও সমাজজীবনে। গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন করে শুল্কারোপের কারণে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়ও চাইতে শুরু করেছে। তাঁদের ধারণা, ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় মার্কিন বাজারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামলাতে এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অতিরিক্ত শুল্কারোপ অন্তত তিন মাস স্থগিত রাখার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়