১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তিতে কৃষক

পেঁয়াজ একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সাধারণত মৌসুমে এর দাম কমে যায়। মৌসুম শেষে দাম বাড়তে থাকে। নিকট অতীতে বেশ কয়েকবারই পেঁয়াজের দাম মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমে এসেছে। আর সে কারণে দেখা দিয়েছে ভিন্ন ধরনের সংকট। দাম কমে যাওয়ায় এখন অস্বস্তিতে রয়েছেন কৃষকরা। এবার বিঘাপ্রতি ফলন কম হয়েছে। গত বছর যে জমিতে ৯০ মণ পেঁয়াজ হয়েছে, এবার সেখানে পেঁয়াজ হয়েছে ৫০ মণ। এর ওপর দামও অনেক কম। গত বছর এ সময়ে প্রায় দুই হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও এ বছর এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে আট থেকে ১০ হাজার টাকা। চাষিরা বলছেন, বীজ প্রতারণা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ফলন কম। তাঁদের অভিযোগ, মৌসুমের শুরুতে ভর্তুকির পেঁয়াজবীজ নিয়ে অনেক কৃষক প্রতারিত হন। পরে সরকার পুনরায় কৃষকদের বীজ দিয়েছে। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, বালাইনাশক ও ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় এবং পোকার আক্রমণের কারণে ফলন কম হয়েছে। পেঁয়াজ তোলার সময় শ্রমিকপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর যে উৎপাদন খরচ হয়েছে, বিক্রি করতে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম দামে। কৃষকরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম দুই হাজার টাকার ওপরে হওয়া প্রয়োজন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। মুড়ি কাটা বা মূল কাটা পেঁয়াজ, যা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ নামে পরিচিত। অন্যটি শীতের পেঁয়াজ। পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেছে নেওয়া হয় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজকে। দুই মৌসুম মিলে গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬ লাখ টন। উৎপাদিত হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন।
পচনশীল বলে কৃষকরা দীর্ঘ সময় পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারেন না। সংরক্ষণব্যবস্থা বা হিমাগারের অভাব রয়েছে। এতে বছরে কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। ফলে চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদিত হলেও প্রতিবছর প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর চাষিরা বাধ্য হন মৌসুমে কম দামে বা লোকসানে হলেও পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সারা দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বাড়াতে হবে। উচ্চফলনশীল বিভিন্ন জাত, বিশেষ করে বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের চাষ সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া কৃষককে আর্থিক সুবিধা দিতে স্বল্প সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা এবং মৌসুুমে ভালো দামের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়