১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ঘনীভূত সংকটের মধ্যে আসছে বাজেট

দেশের শিল্প খাতে স্বস্তি নেই। দুরবস্থা বিরাজ করছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। ব্যাংকঋণে সুদের হার ৯ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ডলারের উচ্চমূল্য ও সংকট শিল্পে কাঁচামালসহ জরুরি আমদানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গ্যাস বা জ্বালানির সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এর ওপর বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। অথচ গণমাধ্যমের খবরাখবরে জানা যায়, শুধু জ্বালানিসংকটে বহু কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। লোকসান টানতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ওপর চলছে শিল্পোদ্যোক্তাদের নানাভাবে হয়রানি। আছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ফলে নতুন উদ্যোগ আসছে না, বরং শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হচ্ছে আগামী অর্থবছর বা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। দেশীয় উদ্যোক্তারা যখন সংকটে থাকেন, নতুন বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে যান, তখন বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রেও ভাটা পড়ে। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কম্পানিগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে ব্যবসার পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এ ছাড়া সরকারের অস্পষ্ট নীতি ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর ঘাটতি, আইনের অস্পষ্টতা ও জটিলতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেও তারা বড় ঝুঁকি মনে করে। জরিপে আরো বলা হয়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ব্যাবসায়িক আস্থা সূচক ৪১.৮ থেকে কমে ৬.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশীয় উদ্যোক্তারাও আস্থার সংকটে রয়েছেন। এর ওপর আসন্ন বাজেটে শিল্প খাতে বিদ্যমান কর রেয়াত ও ভর্তুকি হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হলে অনেক স্থানীয় শিল্প, বিশেষত এসএমই ও নবীন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। পরে তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাস হবে। বাজেটের আকার হবে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে আসন্ন বাজেটের মূল আকার সাত হাজার কোটি টাকা কমবে, দেশে যেমনটি অতীতে কখনো দেখা যায়নি। শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে বাজেট উত্থাপন করা হতে যাচ্ছে, তাতে বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করে কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ হবে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধ রপ্তানি বাজারেও নানা অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিয়েই দুশ্চিন্তা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না, বাড়বে বেকারের সংখ্যা। তাই অর্থনীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে বিদ্যমান শিল্পের সুরক্ষার পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো পরিবেশ সৃষ্টি ও রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে স্বচ্ছন্দ ও নির্ভয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট ঘোষণার আগে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর সঙ্গে বসে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংকট ও তা থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়