৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

প্রায় দেড় যুগ ধরে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক মানবাধিকারগুলো অপূর্ণ থেকেছে। ফলে জনমানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে। স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে।দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারেরও ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে। যে গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে মানুষ রক্ত দিয়েছে, সেই গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষ এখনো পায়নি। তাই জনপ্রতিনিধিত্বকারী বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্র ও নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার যে দাবি গণ-অভ্যুত্থানে উচ্চারিত হয়েছিল, তা নিয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। ফলে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে জনমনে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে। রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতায় পৌঁছতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের একটি তালিকা তৈরি করে। এর ভিত্তিতে দেশের ৩৯টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে লিখিত মতামত আহবান করা হয়।
সেই মতামতের আলোকে জোট ও দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ প্রথম দফা সংলাপ শুরু করে, যা চলে ১৫ মে পর্যন্ত। প্রথম দফা সংলাপে অংশ নেয় ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট। সংলাপে বেশ কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্য হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। আবার কিছু প্রস্তাবে রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো একমত হয়েও নতুন করে শর্ত জুড়ে দিয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, ঠিক কতগুলো প্রস্তাবে জোট ও দলগুলো একমত কিংবা দ্বিমত পোষণ করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ ক্রিয়াশীল দলগুলো সংবিধানের মূলনীতি, সাংবিধানিক কাউন্সিল, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী, সংসদ ও সরকারের মেয়াদ চার বছর করা, গণপরিষদ নির্বাচন এবং ভোটার ও প্রার্থীর বয়সসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে সংবিধানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনার বিষয়ে জামায়াত ও এনসিপি একমত হলেও ভিন্নমত পোষণ করেছে বিএনপি ও তাদের মিত্র দল এবং বাম দলগুলো। এ ছাড়া সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবেও একমত হয়নি তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেউ অভিযুক্ত হলে তাঁকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে এনসিপি একমত হলেও দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল। বিএনপির মতে, কাউকে অভিযুক্ত করলেই তাঁকে দোষী বলা যায় না আর শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা যুক্তিসংগত নয়। সংবিধান ইস্যুতে বিএনপি পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক বলে মত দিয়েছে। তারা মনে করে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হলে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই প্রক্রিয়া আগামী জুলাইয়ে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আমরা আশা করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্যে পৌঁছবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়