অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশিত না হওয়ায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে দলগুলোর দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে এবং দলগুলো এই দাবিতে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে আদালতের রায় পাওয়ার পরও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানো এবং দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগে নগর ভবনের সামনে কয়েক দিন ধরেই চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি, শিল্প-কারখানা ও বিনিয়োগের দুরবস্থা, শ্রমিক অসন্তোষ, সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন-সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়া এবং রাস্তায় নেমে আসার কারণে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও সরকারের সমালোচনা বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনগুলোতে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ক্রমে বাড়তেই থাকবে। তাই সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের রাজনৈতিক ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। গত সোমবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো এবং ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবি করার পাশাপাশি সংসদ নির্বাচন ও সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাসেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষিত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তাঁরা মনে করেন, সরকারের মধ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি করছে। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এক যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে কালো ছায়া দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত থাকার কথাও বলেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।’ সরকার সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কোনো কোনো নেতা। বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ বিরাজনৈতিকীকরণ কিংবা তাদের মদদপুষ্ট একটি দলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে।
তাদের এই চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। মঙ্গলবার অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে ইশরাককে মেয়র হতে দিচ্ছে না।’
দেড় দশকে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ছিল না বলেই গত জুলাই-আগস্টে মানুষ স্বৈরাচারকে রুখে দাঁড়িয়েছিল। বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল। সেই ভোটাধিকার নিয়ে দেশের মানুষ আর কোনো বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে চায় না। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হোক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক।