দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। শিল্প ও বিনিয়োগের দুরবস্থাসহ সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা এখন মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল দাবি জানাচ্ছে, রাস্তায় নামার হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকটি দল নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার মতো কিছু দাবিদাওয়া করছে। ফলে রাজনীতি সংঘাতময় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আর রাজনীতিতে উত্তাপ যত বাড়বে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত বেশি খারাপের দিকে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স অ্যাড্রেসে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই হওয়া উচিত। ৫ আগস্টের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসনসহ প্রায় সব সংস্থার কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হয়। কয়েক হাজার আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়। চোর, ডাকাত, মাস্তান, সন্ত্রাসী প্রায় সবাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সেই অবস্থায় সেনাবাহিনী তৎপর হয় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়। এ জন্য সেনা সদস্যদের অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু মহল থেকে সেনাপ্রধান ও সেনা সদস্যদের বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। সেনাপ্রধান প্রথম থেকেই ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে সেনাবাহিনী দীর্ঘ সময় ধরে এই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণের ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবার স্পষ্ট করেই বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া উচিত। সম্প্রতি করিডর ও বিদেশিদের হাতে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রশ্ন নিয়ে দেশে যে বিতর্ক ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও তিনি বক্তব্য দেন। তাঁর মতে, এসব অন্তর্বর্তী সরকার নয়, নির্বাচিত সরকারের কাজ। তিনি বলেন, মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে, যা করার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই করতে হবে। যা-ই করা হোক না কেন, পলিটিক্যাল কনসেনসাসের (রাজনৈতিক ঐকমত্য) মাধ্যমে সেটি হতে হবে। শুধু দেশের মধ্য থেকেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে নানাভাবে চাপ আসছে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ৪১ জন সিনেটর ও এমপি। তাঁরা বাংলাদেশে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য এবং সময়সীমা নির্ধারিত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব বা অস্পষ্টতা জনগণের মধ্যে অনাস্থা বাড়িয়ে তুলবে এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলবে। সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্যে সঙ্গে একমত পোষণ করে আমরা চাচ্ছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সে লক্ষ্যে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

