১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

জমি বিক্রি ও টাকা পাচার

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মন্ত্রী, এমপি, আমলা এবং দলীয় নেতারা অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছিলেন। সাধারণ মানুষের জমি জোরপূর্বক নামমাত্র মূল্যে দখল করা হয়েছিল। জনরোষে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর নানা যোগসাজশে সেসব সম্পদ একদিকে বিক্রি করা হচ্ছে আবার সেই টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। পূর্বাচল, রূপগঞ্জ, গাজীপুর ও সাভারে ক্ষমতাচ্যুত প্রভাবশালীদের এমন জমি বিক্রির হিড়িক চলছে। সাবেক ডিবি প্রধান মনিরুল, রূপগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজ, যুবলীগ নেতা শাহীন মালুম, আওয়ামী লীগ নেতা মারফত আলী, কালীগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমানের মতো ব্যক্তিরা শত শত কোটি টাকার প্লট ও জমি গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছেন, অনেকেই আবার বিদেশে টাকা পাচার করছেন। জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রূপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে পূর্বাচল উপশহরের ২৬৯টি প্লট রেজিস্ট্রি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৯ মাসে যে হারে পূর্বাচলের প্লট বিক্রি হয়েছে, গত দুই বছরেও এত প্লট বিক্রি হয়নি। এসব প্লটের বেশির ভাগই কমিশনে রেজিস্ট্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে আওয়ামী শাসনামলে দলীয় মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও প্রভাবশালী অনেকে পূর্বাচলে প্লট নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক অন্তত ২২ মন্ত্রী, ১২ প্রতিমন্ত্রী ও ৩৯ জন সচিব। এ ছাড়া আছেন ২৭ জন সাংবাদিক, ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী। তালিকায় আরো অনেকে রয়েছেন। অথচ স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেছে, পূর্বাচলের জমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তারা সেভাবে প্লট পায়নি, এমনকি ক্ষতিপূরণের টাকাও ঠিকমতো পায়নি। সাম্প্রতিক এই সন্দেহজনক লেনদেনগুলো বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটেরও (বিএফআইইউ) নজরে এসেছে। গত ১০ মাসে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে আনুমানিক ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি থেকে দুই লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। এই অর্থ ফেরত আনাই বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বিক্রি করে টাকা পাচারের সাম্প্রতিক ঘটনা। গত মঙ্গলবার সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা ও তাঁর স্ত্রী জমি বিক্রি করতে গেলে জনতা তাঁদের অবরুদ্ধ করে, পরে পুলিশ তাঁদের হেফাজতে নেয়। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত দ্রুততার সঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ হস্তান্তরে লাগাম টানা এবং এসব সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের হদিস করা। পাশাপাশি এরই মধ্যে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়