বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। গত শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যদি কোনো মানবিক করিডর দেওয়া হয়, তাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।
‘বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা : প্রেক্ষিত মানবিক করিডর’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যানালিসিস। অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.) মো. জগলুল আহসান। লিখিত বক্তব্যে তিনি এর সুবিধা-অসুবিধার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সম্পূর্ণ গোপনে এই কাজটি করার কথা বলা হলো।
এতে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।’ তিনি প্রশ্ন করেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে এত গোপনীয়তা কেন? কী আছে এর মধ্যে? তিনি বলেন, ‘এটি দেওয়ার এখতিয়ারই তো নেই এই সরকারের। আরাকান আর্মির অনেক কিছু দরকার। নেপিডোর চেয়েও তারা খারাপ।তারা আমাদের দেশে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে। এতে তো আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসিনা যেমন ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য সবকিছুর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে অন্য রাষ্ট্রের ইন্টারেস্ট সার্ভ করেছেন, আপনি কি (ড. ইউনূস) সেদিকে যাচ্ছেন?’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকারের এ রকম গোপন এজেন্ডা সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক হতে হবে। এ রকম সিদ্ধান্ত আসতে হবে সংসদ থেকে।’ সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ বলেন, এখানে বিদেশি কোনো দেশের ইন্টারেস্ট আছে।
এই করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, মানবিক করিডর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বৈধ প্রক্রিয়ায় কেবল নির্বাচিত সরকারই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। সেই থেকে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আমরা আশা করি, করিডর নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসানে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

