মাসুম বিল্লাহ, কেশবপুর
বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পটি বর্তমান মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যে কারণে যশোরের কেশবপুরে ৩ নদী ও ১০ সংযোগ খাল পুনঃখনন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে গত বারের ন্যায় এ জনপদের লাখ লাখ বাসিন্দাকে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করতে হবে। এনিয়ে বানভাসীরা উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নদী-খাল খননসহ নদী অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন ও পোল্ডারে আবদ্ধ নদ-নদী উন্মুক্তের দাবি জানিয়ে আসছেন। গত বছরের ভারী বর্ষনে এ উপজেলার ১০৪ টি গ্রাম ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি টাকা কৃষি ও মৎস্যতে ক্ষতি হয়। বন্যা কবলিত এলাকার জনগণকে মানবেতর জীবন যাপণ করতে হয়েছে। বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২৪/২৫ অর্থবছরে ৩ নদী ও ১০ সংযোগ খাল পুনঃখননে ১৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এ খবরে উপজেলার লাখ লাখ বানভাসীরা আশায় বুক বাধে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে বানভাসীদের স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
ভূক্তভোগীরা জানায়, কেশবপুর মনিরামপুর উপজেলার বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরি নদীর শাখা দেলুটি হয়ে শিবশা নদী দিয়ে সাগরে পতিত হয়। এর সংযোগ নদী রয়েছে কেশবপুর উপজেলার আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী। যা মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন পোল্ডারের কারণে প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে এসব নদীতে জোয়ার-ভাটা উঠে না। ফলে নদীগুলো পলিতে ভরাট হয়ে বন্যায় রূপ নিয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষন হলে জনগণকে আবারও ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করতে হবে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, হরি নদীর খর্নিয়া ব্রিজ থেকে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার, হরি নদীর শাখা আপারভদ্রার কাশিমপুর থেকে মঙ্গলকোট ব্রিজ পর্যন্ত ১৮.৫০ কিলোমিটার ও বড়েঙ্গার তিন নদীর মোহনার জিরো পয়েন্ট থেকে কেশবপুর ও মনিরামপুর হয়ে রাজগঞ্জ রোর্ড পর্যন্ত হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে বর্তমান মৃত প্রায়। বর্ষার অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্যে নদীগুলো পুনঃখনন জরুরী হয়ে পড়েছে।
তিন নদী মোহনার বাসিন্দা বড়েঙ্গা গ্রামের সুকুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতি শুষ্ক মৌসুমের ১৫ মাঘ থেকে নদীতে পলি আসা শুরু হয়। এজন্যে ১৫ মাঘের আগেই আপারভদ্রার কাশিমপুরে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্ত পাউবোর বিলম্বে বাঁধ দেয়ার কারণে পলিতে নদী ভরাট হয়ে যায়। ফলে নদী খনন জনগণের কোনো কল্যানে আসে না। হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাপাউবোর সদস্য মহিরউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৬০ সালের পূর্বে এ অববাহিকায় গোনে-বেগোনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি ঘনমিটার পলি সঞ্চালিত হতো। পোল্ডার ব্যবস্থার পরে তা কমে ২ থেকে আড়াই কোটি ঘনমিটারে দাঁড়ায়। পলির পরিমান ঠিক থাকলেও পানির সঞ্চালন কমে যাওয়ায় জোয়ারের প্রান্ত ভাগ থেকে পলি জমতে থাকে। একই সাথে ভূমির নিন্ম গমন ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে জোয়ারের পানির উ”চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় নদী সচল রাখতে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরী। পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩ নদী ও ১০ খাল পুনঃখননে ১৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তা অনুমোদন হয়নি। যে কারণে এবছর নদী খনন সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর মাঝখান দিয়ে খনন করে পানি সরানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার খনন কাজ শুরু হয়েছে। এসব নদী-খাল খনন করা হলে এলাকা জলাবদ্ধতা মুক্ত ও বন্যা মুক্ত হবে।