দেশের রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয় এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হঠাৎ করেই ঘোষণা করেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে কোনো এক দিন। নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় হতাশা প্রকাশ করে।
তাদের দাবি, নির্বাচন হতে হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই। এপ্রিল কোনোক্রমেই নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। পাশাপাশি তারা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানেরও দাবি করেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে, এই বৈঠকের পরই বোঝা যাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে।
এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা মেনে নিতে পারেনি বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা সবাই ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করে।
বিএনপি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে এবং প্রধান উপদেষ্টা শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ’ ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল এবং এনসিপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় সম্পর্কে শর্ত দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করা দলগুলো যদি তাদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে দেশের রাজনীতিতে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে। সেদিক থেকে আগামীকাল লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যকার বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এপ্রিল মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসবমুখর পরিবেশে দেখতে চায়। অথচ ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। রোজার মধ্যে নির্বাচনী প্রচার অভিযানে অংশ নেওয়াটা খুবই কষ্টকর হবে। তা ছাড়া এপ্রিলে প্রচণ্ড গরম থাকবে। সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি কিংবা ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকে। এ সময় কালবৈশাখীসহ ঝড়বৃষ্টি প্রায়ই হয়ে থাকে। এ সময়টা এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা ও তার প্রস্তুতির সময়। তখন বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম থাকবে। কোনো কৃষকই তখন মাঠ ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আসতে চাইবেন না। তাই এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে বিশেষজ্ঞরা খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন না।
আমরা মনে করি, দেশের স্বার্থেই নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে উভয় পক্ষেরই এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।