১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ব্যবসার পরিবেশ রক্ষা জরুরি

দেশে শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতার পাশাপাশি এই স্থবিরতার বড় কারণ ঋণের উচ্চ সুদহার। কঠোর মুদ্রানীতির কবলে পড়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এতে পুরনো ব্যবসার সম্প্রসারণ যেমন থমকে গেছে, তেমনি নতুন বিনিয়োগ ঠেকেছে তলানিতে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতেও ধস নেমেছে। চাকরি হারাচ্ছেন কর্মীরা, বাড়ছে বেকারত্ব। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। মাত্রাতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করাও সম্ভব নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের এমন করুণ অবস্থাই উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এপ্রিলে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৫০ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪০ শতাংশ কম। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ২১ হাজার ৮২২ কোটি, যা মার্চ মাসে ছিল ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৮২ শতাংশ। আর জানুয়ারিতে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির যে তথ্য আছে, তার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের মে মাসে কভিড মহামারির মধ্যেই কেবল বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭.৫৫ শতাংশে নেমেছিল। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। দারিদ্র্য বিমোচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ সুদে। তা ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, জ্বালানিসংকটসহ আরো কিছু কারণে উদ্যোগ কমে যাচ্ছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান মনে করেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পেছনে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও আর্থিক অস্থিরতা দায়ী। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকঋণে উচ্চ সুদের হার আরোপ করা হচ্ছে, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহ করছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতির স্থিতিশীলতার অভাবে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। ফলে ঋণের চাহিদা কমছে, বিনিয়োগ থমকে যাচ্ছে।’ বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ক্রমেই গতি হারাচ্ছে, তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে আসছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ। গত জানুয়ারিতেও বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ৪.১ শতাংশ হবে। এবার ঈদুল আজহা ঘিরে দেশীয় পোশাক বিক্রিতে বড় ধাক্কা খেয়েছেন উদ্যোক্তারা। পোশাক বিক্রি ছিল লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও নিচে। অর্থনীতির এই পতন ঠেকাতে জরুরি ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়