১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

মণিরামপুরের শাহ মান্দারতলা হিন্দু-মুসলিম ধর্মের পবিত্রস্থান

জি এম ফারুক আলম, মণিরামপুর
প্রায় ৮শ বছরের শাহমান্দারতলা হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের অনুসারিরা একত্রে একই স্থানে যে যার ধর্ম পালন করে। এটি দুই ধর্মের মিলন স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত মুসলিম ধর্মের মানুষের কাছে স্থানটি পীর-আউলিয়ার স্থান, আর সনাতন ধর্মাবলীদের কাছে এটি পুজাস্থান। এক কথায় সব ধর্মের মানুষের কাছে এটি পবিত্রস্থান। এতে কোন ধর্মের মানুষের আপত্তি বা বিধি নিষেধ নেই। শাহমন্দারতলা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কাটাখালি, ভোমরদাহ, নলডাঙ্গা,হাজিরহাটসহ কয়েকটি গ্রাম বেষ্টিত ডুমুর বিলের গা ঘেষে অবস্থিত। ঠিক তার বিপরীত পাশে মুক্তেশ্বরী নদী। বিশ্বাস ও আবেগের জায়গা হতে প্রতিদিন এক বুক আশা নিয়ে হিন্দু-মুসলিমসহ সকল শ্রেণির মানুষ যার সন্তান হয়নি, তিনি সন্তান লাভের আশায়, বিপদ-আপদ, মামলা-হামলা থেকে মুক্তির আশায় আসেন। বটগাছের নিচে নারী-পুরুষ শাড়ির আঁচল কিংবা গামছা বিছিয়ে বসেন। গাছ থেকে ফুল-পাতা পড়লে সেটি আশা পূরণে ইট ঝুলিয়ে মানের বাসনা কামনা করেন। সুফল পেলে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, টাকা-পয়সা দান করেন। স্থানীয় হরিদাসকাটি গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ সুভাষ মন্ডল জানান, তার বাবা রসময় মন্ডলের কাছে শুনেছেন বহু বছর আগে এই জায়গায় একজন সাধক পুরুষ এইখানে বটগাছের নিচে ধ্যান করতেন। তিনি খুবই খোদাভক্ত ছিলেন। তার বাবা রসময় মন্ডল শুনেছেন তার বাবা সীতারাম মন্ডলের কাছে শুনেছেন। সীতারাম মন্ডল শুনেছেন তার বাবা বিহারী মন্ডলের কাছে। কাটাখালি গ্রামের নূর ইসলাম সরদার নামের আরেক অশীতিপন বৃদ্ধ একইভাবে শুনেছেন তার বাবা আকাম আলী সরদারের কাছে। তিনি শুনেছেন তার বাবা ইদু সরদারের কাছে। তিনি শুনেছেন তার বাবা তমিজ সরদারের কাছে। বার শতাব্দির প্রথম থেকে ইরান, ইয়ামেন, ইরাকসহ অধুনা মধ্য প্রাচ্যের দেশ থেকে এই বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রচারে পীর, দরবেশ, আউলিয়ার আগম ঘটে। স্থানীয়দের ধারনা সেই ৮শ বছর আগে শাহমান্দার নামে এক সাধক পুরুষ এখানে আস্থানা গাড়েন। তখন এই ঘন-জঙ্গলে পূর্ণ জায়গাটিতে বাঘ, ভাল্লুক, শিয়াল, খিঞ্জিরসহ বণ্য প্রাণির বসবাস ছিল। ভয়ে কেউ এদিকে মাড়াতেন না। দুই একজন ওই সাধক পুরুষের কাছে এসে নানা অলৌকিক ঘটনা দেখেছেন। পরে জানতে পারেন শাহমান্দার ছিলেন পীর। হঠাৎ একদিন এই সাধক পুরুষ উধাও হন। এরপর থেকে এই জায়গাটি আজও মানুষের মুখে-মুখে কিংবদন্তি কাহিনীর মত ভেসে বেড়াচ্ছে। গত ৩০ বছর ধরে জায়গাটি দেখা-শুনা করেন গণেশ গোসাই। তিনি জানান, তার আগে কার্ত্তিক গোসাই দেখাশুনা করতেন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়