৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

আলু নিয়ে একটা মজার ঘটনা

প্রতিদিনের ডেস্ক॥
বাংলায় আফিম চাষের সূত্র ধরেই আলু নিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটল। আফিমের খোসা, যেটাকে এখন আমরা পোস্ত নামে চিনি – সেটা আগে ফেলে দেওয়া হত। কিন্তু বাঁকুড়া-বীরভূমের আফিম চাষীরা লক্ষ্য করল, ওই খোসাটা যদি আলুর সঙ্গে রান্না করা যায় তাহলে দারুণ খেতে লাগে। ব্যাস, এভাবেই আলু-পোস্তর হাত ধরেই বাংলার হেঁশেলে আলু ঢুকতে শুরু করলো, তবে তখনও সেটা সীমিত ছিল নিম্নবিত্ত চাষাভুষোদের ঘরেই। কলকাতার সম্পন্ন পয়সাওলা বাবুদের খাবার পাতে আলু এলো আরও অনেক পরে – আর তাতেও ওয়াজেদ আলি শাহর একটা পরোক্ষ অবদান আছে। আসলে অওধের নবাব যখন তার লোকলস্কর আর পাইক-বরকন্দাজ নিয়ে লখনৌ থেকে কলকাতায় এলেন, তার সঙ্গে প্রিয় বাঈজিদেরও এনেছিলেন, আর এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন দু’জন, নিম্মিবাঈ আর মুন্নিবাঈ। এই ডাকসাইটে সুন্দরী আর লাস্যময়ী নর্তকীদের নিয়ে জলসা বসাতে কলকাতার পয়সাওলা বাবুদের মধ্যে গঙ্গার ধারে বাগানবাড়ি বানানোর হিড়িক পড়ে গেল – আর বেশি মাইনের লোভে নবাবের অনেক খানসামা, বাবুর্চি, আর্দালিও সেখানে গিয়ে জুটলো। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল, কিন্তু গোল বাঁধলো যখন অতিরিক্ত তেল-ঘি-ওলা মশলাদার নবাবি খানা বাঙালি বাবুদের পেটে সহ্য হলো না! ঠিক এই সমস্যার সমাধান বের করতেই রান্নাঘরে আলুর আমদানি – কারণ দেখা গেল বাজারে সদ্য আসা এই নতুন সব্জিটা তেল-মশলা অনেকটা টেনে নিয়ে পদগুলোকে যেমন বেশ সহজপাচ্য করে তোলে, সেই সঙ্গে নিজেও সেই রঙে-রসে জারিত হয়ে ওঠে অসম্ভব সুস্বাদু! ফলে কলকাতার বিরিয়ানিতে আলুর এই ‘এলাম-দেখলাম-জয় করলাম’ সাফল্যের পেছনে আমি কৃতিত্ব দেব বাঙালির দু্‍র্বল হজম ক্ষমতাকেই! এক টানে বলে যান জহর সরকার। ওয়াজেদ আলি শাহ-র পয়সার টানাটানি ছিল বলে বিরিয়ানিতে মাংসের সঙ্গে আলু মেশাতেন, এর চেয়ে বাজে কথা আর কিছুই হতে পারে না!বিরিয়ানিতে আলু আর ডিম মেশালে রান্নাটা অনেকটা ‘লাইট’ বা হালকা হয়, মশলাটা টেনে যায়, জেনে রাখুন এটাই আসল কারণ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়