৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

চালু হয়নি ১০০ শয্যা, ৪ চিকিৎিসক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত: চৌগাছা হাসপাতালে ৩৮ কোটি টাকার ভবণ কাজে আসছে না

এম এ রহিম, চৌগাছা
যশোরের চৌগাছা হাসপাতালে ৩৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ভবণটি কাজে আসছে না। চালু হওয়ার আগেই চুরি হয়ে যাচ্ছে ভবণটির বিভিন্ন মালামাল। ফলে চালু হয়নি ১০০ শয্যার কার্যক্রম। চার জন চিকিৎিসক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় দারুণ ভাবে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। দেশসেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত এই হাসপাতালে প্রচুর রোগী হয়। এ কারণে তা একশ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জানা যায়,প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ৬ তলা ভবন নির্মিত হলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। আগের ৫০ শয্যার জন্য যে লোকবল প্রয়োজন, আছে তার ৩ ভাগের ১ ভাগেরও কম। চৌগাছা ছাড়াও যশোর সদর, ঝিকরগাছা, মহেশপুর, কালিগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলার রোগীরা এখানে সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৫শ থেকে ৬শ জন রোগী চিকিৎসা নেন। ৫০ শয্যার বিপরীতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। ৫০ শয্যার হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ চিকিৎসক থাকার কথা ৩২ জন। খাতা কলমে ১৭ জন থাকলেও মূলত প্রেষণে রয়েছেন ৪ জন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত আছেন সামান্তা রহমান শান্তা (২ বছর) ও ডা. সঞ্চিতা সেন (২ মাস), ডা. মৃদুল কান্তি (১১ বছর), ডা. গোলাম রসুল (১ বছর), অনুপস্থিত ৪ জনের ৩ জনই দেশের বাইরে আছেন। স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ৯ জন। মূলত স্বাস্থ্যসেবার সহজপ্রাপ্তির জন্যে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী বেশি হয়। রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতর ঘোষণা দেওয়া হয়। এ জন্য আরও একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তিনটি গুচ্ছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের এ ভবণটি নির্মিতহয়। এর মধ্যে ৬ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবন ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২১সালের ২৯ এপ্রিল এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এছাড়া অক্সিজেনপ্ল্যান্টসহ সরবরাহ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণ ও হস্তান্তর হলেওভবনটিতে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বুধবার (১৮জুন) সরেজমিনে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, ১০০ শয্যায় নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রাশাসনিক জটিলতায় দেড় বছরের বেশ সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই জানালা, দরজাসহ প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে পুরাতন ভবনের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে। হাসপাতালটির বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। শয্যার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অসংখ্য রোগী বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। দেখার যেন কেউ নেই সুনামধন্য সরকারি হাসপাতালটিতে প্রচুর সংখ্যক রোগী রয়েছে। জনবল সংকটে পর্যাপ্ত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালে কর্মরত সেবিকা ও চিকিৎসকরা। চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালটি ২০০৪-২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে টানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসাবে স্বীকৃতি পায় এটি। ২০১৮ সালেও জাতীয় পুরস্কার পায়। সর্বশেষ স্বাস্থ্যসেবায় সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে পায় হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০২০। চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভবনটি কার্যক্রমের আওতায় না এলেও সেখানকার বাথরুম ফিটিংস, ট্যাপ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন পপ্ল্যান্টের দৃশ্যমান পাইপ ইত্যাদি চুরি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় চটে গেছে রং। জনবল সংকটের বিষয়ে হাসপাতালের সিনিয়র সেবিকা ঝুমুর রাণী হালদার বলেন, চিকিৎসক, সেবিকাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সংকটের কারণে আমাদের সেবা দিতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখান থেকে চারজন মিডওয়াইফারি বদলি হলেও নতুন কেউ আসেননি। রয়েছে সুইপার ও ঝাড়ুদার সংকট। চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহ. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, এ হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও আমরা এখনো সেই কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। আমাদের মেডিকেল অফিসার, কনসালট্যান্ট, সেবিকা, সুইপারসহ বিভিন্ন পদে জনবলই সংকট রয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, হাসপাতালটির ১০০ শয্যার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রোগীদের ওষুধ ও খাবারের অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, সারা দেশের হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, সেপ্টেম্বর নাগাদ ¯েপশাল বিসিএসের মাধ্যমে ৩ হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে। সেই সময় এই সংকট থেকে উত্তরণ হবে হাসপাতাল গুলো।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়