৪ঠা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

গুমে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

অতীতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিপক্ষকে জোরপূর্বক গুমের অনেক ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেসব ঘটনা তদন্তাধীন আছে। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গুমের সেসব ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাপকভাবে আলোচিত। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিচার প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। গত সোমবার জাতিসংঘের জোরপূর্বক গুম বিষয়ক কার্যনির্বাহী দলের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোওয়াস্কার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁর প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা যায়, গ্রাজিনা বারানোওয়াস্কা বিভিন্ন সংস্থায় (যেমন-র‌্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবি) অতীতে কর্মরত কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জবাবে সেনাবাহিনী প্রধান জানান, এ ধরনের সেনা সদস্যরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রণাধীন থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিচার প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধবিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে। এই আইনের অধীনে গুমবিষয়ক একটি শক্তিশালী স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে। সোমবার সচিবালয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিস-অ্যাপিয়ারেন্সের (ডব্লিউজিইআইডি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে জোর করে গুম করার অভিযোগ তদন্তে গত রবিবার ঢাকায় আসে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ডব্লিউজিইআইডির দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল। সদস্যরা হলেন গ্রাজিনা বারানোওয়াস্কা ও আনা লোরেনা দেলগাদিলো পেরেজ। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও পরিদর্শনে যান ডব্লিউজিইআইডির প্রতিনিধিরা। পরে এ নিয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা। আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের সরকারের একটা কমিটমেন্ট ছিল গুমের তদন্ত ও বিচার করা।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছে, তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। মিটিংয়ে বসার পর তারা আমাদের কিছু কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে, গুম কমিশনের প্রশংসা করেছে, আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছি সেটির প্রশংসা করেছে। আর গুমবিষয়ক কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছে।’ গুম প্রতিরোধে যে আইন করার কথা বলা হচ্ছে, সেই আইন হলে নির্বাচিত সরকার এসে তা বাতিল করে দিতে পারে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যে সরকারই আসুক, তারা সবাই গুমের শিকার। সবাই এ বিষয়ে সোচ্চার ছিল। আর বিএনপি-জামায়াত তো সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার ছিল।’ বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অভিযোগ ব্যাপক হতে থাকে। জানা যায়, গুমের অভিযোগ তদন্তে ঢাকা সফরের অনুরোধ জানিয়ে আসছিল ডব্লিউজিইআইডি। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে চিঠিও দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু এতে সাড়া দেয়নি শেখ হাসিনা সরকার। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিলও সফরের অনুমতি চেয়েছিল ডব্লিউজিইআইডি। সেবারও অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে ব্রিফিংয়ে জানান আইন উপদেষ্টা। আমরা চাই, অতীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি গুমের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হোক। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়