৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

সংকটে দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ

দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, সব ক্ষেত্রেই এক মারাত্মক আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব জোরালো হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। পুরনো অনেক শিল্প-কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা। ঋণের সুদহার অনেক বেশি। পুঁজিবাজার ধুঁকছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ব্যবসায়ীদেরও দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। আর এসবের সম্মিলিত প্রভাব পড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ে। তার ওপর অর্থবছরের শেষ দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে টানা কর্মবিরতি চলায় রাজস্ব আহরণ আরো বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির মুখে সরকার। অন্যদিকে নানা কারণে বেড়েছে ব্যয়। তাই সরকারের ধারকর্জ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এ পর্যন্ত সরকারের ঋণ পৌঁছেছে ২৩ লাখ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের ঘাড়ে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে প্রতি মাসেই এনবিআরকে আদায় করতে হতো ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই লক্ষ্য অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয় জেনে পরে লক্ষ্য কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছিল। ছোট করা লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারছে না সংস্থাটি। প্রতি মাসে প্রায় ৩৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার মতো আদায় করার কথা। সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গত ১১ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে লাখ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে আদায় হওয়ার কথা চার লাখ ২৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। অথচ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এই সময়ে আদায় হয়েছে তিন লাখ ২২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত আদায়ের তুলনায় এক লাখ দুই হাজার ৬৪২ কোটি টাকা কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৩.৬৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে অর্থ বিভাগের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশীয় উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ঘাটতি মেটানোর জন্য ঋণ নেওয়া ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অথবা ব্যাংকিং খাত থেকে এই ঋণ নিয়েই হয়তো এই ঘাটতি মেটানো হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাত থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ কমে যাবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর এমনটি হলে দীর্ঘ মেয়াদে তার ফল আরো নেতিবাচক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরো বেশি নজর দিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়