১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

বেনাপোল কাস্টমস হাউজ : ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও কেমিক্যাল ল্যাবের নষ্ট মেশিন দুটি আজও অচল

সুন্দর সাহা
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কেমিক্যাল ল্যাবের ‘হ্যাজমেট’ নামের দুটি অত্যাধুনিক মেশিন প্রায় এক বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। এতে আমদানিকারকরা যেমন অর্থদণ্ড ও দীর্ঘসূত্রিতায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি শিল্পকলকারখানার উৎপাদনেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, এনবিআরের অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তারা মেশিনটি মেরামত করতে বিলম্ব হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে মেশিন দুটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেশিন মেরামতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে সংশ্লষ্টি ঠিকাদার কোটেসান দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বেনাপোল কেমিক্যাল ল্যাব উদ্বোধন করেন তৎকালীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও নিরীক্ষা আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান। আমদানিকৃত অনেক কেমিক্যালে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়। কেমিকেলের নামে মাদক ও বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসব মেশিন যুক্ত হওয়ায় অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত ছিল দেশ। মিথ্যা ঘোষণায় ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি বন্ধের মাধ্যমে চোরাকারবারিও নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। কিন্তু অচল মেশিনটি মেরামতে কারো কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্চিল না।

দীর্ঘদিন মেশিনটি অচল থাকায় সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের স্বার্থের দিকে চেয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন থেকে মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কী কারণে বন্ধ হয়ে গেলো কেউ বলতে পারেনি। বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, বেনাপোল বন্দরে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্যের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে খাদ্যপণ্য ও শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কেমিকেল। প্রতিবছর এ পণ্য থেকেই আসে প্রায় ৪০ শতাংশ রাজস্ব। তবে এসব পণ্যের মধ্যে কিছু কিছু পণ্য খালাসের আগে গুণগত মান পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ল্যাবে দুটি মেশিন রয়েছে, যার একটি ‘রিসকিউ হ্যান্ডহেল্ড রমন স্পেকট্রোমিটার’ ও অপরটি ‘হ্যাজমেট’। এ দুটি মেশিন দিয়ে এতোদিন কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যের মান পরীক্ষা করা হতো। ‘হ্যাজমেট’ মেশিন দুটি প্রায় এক বছর ধরে অচল থাকায় এসব পণ্য পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হচ্ছে যশোর, খুলনা বা ঢাকার ল্যাবে যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বেনাপোল কাস্টমস ল্যাবের টেকনিশিয়ান তাপস কুমার দেবনাথ দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে জানান, মেশিনটি সচল করতে অন্তত ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এনবিআর ল্যাবের যন্ত্রপাতি মেরামতে কোনো বরাদ্দ দেয় না। সে কারণে বর্তমান কমিশনার মেশিন দুটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়ে মেশিন স্থাপনকারী ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেন। ঠিকাদার ১৫ রাখ টাকার একটি কোটেসান সাবমিট করেন। সে মোতাবেক মেশিন দুটি মেরামতের নির্দেশনা দেয়া হলেও টাকার অভাবে যা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ মেশিন মেরামতের জন্য চলতি অর্থবছর থেকে আংশিক এবং আগামী অর্থবছরে বাকি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্টান কাজ শুরুও করেছে। কিন্তু তারা চাইছে কাজ শেষ করতে অগ্রিম কিছু টাকা। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবু তাহের ভারত দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে বলেন, মেশিন অচলের কারণে এখন বাইরে পরীক্ষার জন্য পণ্যের নমুনা পাঠানো হয়। সেখান থেকে রিপোর্ট আসতে ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। প্রতিটি চালানে পরীক্ষার জন্য ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। যে টাকাটা আমদানিকারককে দিতে হয়। যেখানে বেনাপোল কাস্টমস থেকে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়, সেখানে একটি মেশিন মেরামতে টাকা বরাদ্দ না থাকা দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় বন্দরে পণ্য আটকে থাকছে। এতে পণ্যের মান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিকৃত মোট পণ্যের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই কেমিকেল পণ্য। দ্রুত মেশিনটি মেরামতের জন্য এনবিআরের কাছে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে বলেন, কেমিক্যাল ল্যাবের মেশিনটি সচল করার জন্য এনবিআরে জানানো হয়েছে। চলতি অর্থ-বছরে সম্ভব না হলেও আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বরাদ্দ এলে মেশিনটি মেরামত করা হবে। অনেক টাকার ব্যাপার বলেই একটু দেরি হচ্ছে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন থেকে মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, না। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন থেকে কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে মেশিন দুটি মেরামত করা হবে না। এনবিআর বরাদ্দ দিলেই মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে। দ্রুতই এটি মেরামতের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়