১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

নড়াইলের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে তালাবদ্ধ কক্ষ, ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা

রেজাউল করিম, লোহাগড়া
‘সরকার আমাদের মতো গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষের জন্য এই হাসপাতালে ব্যবস্থা করেছে যেন আমরা কম খরচে চিকিৎসা নিতে পারি। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য কখনোই বাস্তব হয়নি। এই হাসপাতাল অনেক দিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এখানে চিকিৎসক থাকেন না, ওষুধ থাকে না। বেশিরভাগ সময় তালা দেওয়া থাকে। আর খোলা পেলেও কোনো সেবা মেলে না, ডাক্তার পাওয়া যায় না।’ কথা গুলো বলছিলেন শীতলপাটি গ্রামের মো. হামিদুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, যে সুবিধার জন্য এই হাসপাতাল গড়া হয়েছিল, তা আমরা পাচ্ছি না। যদি সেবা চালু থাকত, তাহলে আমাদের এত কষ্ট করে টাকা খরচ করে নড়াইল বা খুলনায় ছুটতে হতো না চিকিৎসার জন্য। নড়াইল কালিয়া উপজেলার খড়লিয়া বাজারে অবস্থিত মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের পকেট দরজা খোলা। কিছুক্ষণ পরপর সেখান দিয়ে একজন-দুজন করে নারী ও শিশুরা আসছেন। কেউ আসছেন চিকিৎসকের খোঁজে, কেউ ওষুধ নিতে। আবার কেউ আসছেন শুধু পরামর্শ নিতে। কিন্তু হাসপাতাল ভবনে ঢুকে তারা দেখছেন সব কক্ষই তালাবদ্ধ, চিকিৎসক ও ওষুধ কোনোটিই নেই। সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন তারা। রোগীরা এসে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অফিস সহায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা কর্মরত আছেন। আর একজন চিকিৎসক (সংযুক্তিতে) আছেন। এই তিনজন সপ্তাহে দুই দিন করে রোগী দেখেন। আজ যে চিকিৎসকের আসার কথা ছিল তিনি ছুটিতে আছেন, ফলে রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি এখানে এসেছি চিকিৎসা নিতে। এসে দেখালাম এখানে কোনো ডাক্তার নেই। ঈদের ছটির পর আসছি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সঠিকভাবে চললে পেড়লি, পার্শ্ববর্তী পাঁচগ্রাম ও সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ সেবা পেতেন। কিন্তু কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো হলেও জনবল সংকটে পাঁচ বছর পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না এ অঞ্চলের মা ও শিশুরা। অবকাঠামো আছে, কিন্তু চিকিৎসক ও ওষুধের সংকটে পড়ে আছে পুরো হাসপাতাল। আরেকজন সেবা প্রত্যাশী বলেন, আমি এখানে প্রায়ই আসি। মাঝে মাঝে খোলা পাই, মাঝে মাঝে বন্ধ পাই। ওষুধ তো থাকে না। আজ ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি। পেড়লি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, কালিয়ার পেড়লি ইউনিয়নের খড়রিয়া বাজারের পাশে ৫০ শতক জমির ওপর নির্মিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ২০২০ সালে উদ্বোধন করা হয়। ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে করা হয়েছিল দুটি তিনতলা ভবন। এর মধ্যে একটি হাসপাতাল ভবন। আরেকটি চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনে রয়েছে ৫ শয্যা করে ১০ শয্যার ২টি ওয়ার্ড ও ১০টি কেবিন। আছে আধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ। কালিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য পদ আছে ১০টি। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), একজন ফার্মাসিস্ট, চারজন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, একজন অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক একজন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালুর পর থেকে অধিকাংশ পদই শূন্য। একজন ফার্মাসিস্ট ও পরিদর্শিকা নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনবলসংকট থাকায় তাদের সেসব স্থানেও যেতে হয়। ফলে তারা একেকজন এখানে সপ্তাহে দুই দিন করে সময় দেন। সপ্তাহের বাকি দুই দিন সংযুক্তিতে আসা একজন চিকিৎসক এখানে থাকেন। সার্বক্ষণিক থাকেন শুধু একজন অফিস সহায়ক, তিনিও অন্য জায়গা থেকে সংযুক্তিতে এসেছেন। পেড়লি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা গীতা রানী বিশ্বাস বলেন, হাসাপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা সেভাবে তাদের সেবা দিতে পারি না। হাসপাতালে আমরা গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়ে থাকি। ডেলিভারি, সিজার এ সেবাগুলো ডাক্তার না থাকায় দিতে পারি না।এখানে আমার একার পক্ষে সেবা দেওয়া সম্ভব না। হাসপাতালে মেডিকেল ডাক্তার প্রয়োজন, আয়া দরকার, একটা নাইট গার্ড দরকার, এমএল এস নাই। এখানে জনবলের খুবই অভাব। যার জন্য এলাকাবাসী প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আলিফ নূর বলেন, হাসপাতালটি আমরা স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় চালু রাখছি। আমাদের উপজেলা মেডিকেল অফিসার সুবিধাজনক সময়ে সেখানে গিয়ে সেবা দেন। প্রতিদিন হাসপাতাল খোলা থাকে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়