এম এম উজ্জ্বল
‘বলো মা, কবুল’ কাজী সাহেবের কথার জবাবে ‘কবুল’ বলে শেষ করতে না করতেই পাশে রাখা ফোনে টুং করে শব্দ হলো। একটি মেসেজ এসেছে। কোনো রকমে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আবিরের মেসেজ, ‘গত রাতে রাশিয়া থেকে ফিরেছি। তোমার সাথে দেখা করতে চাই। বিস্তারিত কথা সাক্ষাতে হবে।’
সারা শরীরে ভূমিকম্পের মতো শক্ত ঝাঁকি খেয়ে গেলো। আমি এখনই কবুল বললাম আর তোমার মেসেজ আসতে হলো? সাতটি বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। প্রথমে কিছুদিন কথা হলেও বিগত চার বছরে একটা ফোন কিংবা মেসেজ পর্যন্ত দাওনি। ছোট্ট একটি মেসেজের আশায় ছটফট করতে করতে কলিজা শুকিয়ে বাইরে বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে বহুবার। নির্ঘুম রাত কেটেছে মাসের পর মাস। তুমি তিন বছর পরই ফিরে আসবে বলে সেই যে রাশিয়ায় গেলে, তারপর পেরিয়ে গেলো সাতটি বছর।
এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিটি সেকেন্ড আমার জীবন থেকে কীভাবে ক্ষয়ে গেল সে বিরহ-ব্যথা তুমি বুঝবে না। শত কটু কথার ভিড়ে তোমার আশায় কীভাবে বেঁচে আছি, তা-ও তুমি জানবে না। আমি তো বাঙালি সমাজে বেড়ে ওঠা মেয়ে। এই সমাজ এখনো এতটুকু শিক্ষিত হয়নি যে, আইবুড়ো একটা মেয়ে বাবার ঘরে থাকবে কিন্তু সমাজ কোনো কথা বলবে না।
প্রতিবার যখন বিয়ের সম্বন্ধ আসতো, আমার বাবা, বেচারা অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। স্নেহের বাঁধনের কাছে নিরুপায় কণ্ঠে কোনো কথা বের হতো না। নিজ চিত্ত নিজেকে ধিক্কার দিতো। কিন্তু আমার মন বলতো, তুমি ফিরে আসবে। যুদ্ধ শেষে রাশিয়া থেকে নিশ্চয়ই আসবে। আমাদের বিয়ে হবে, সংসার হবে, আমার কোলজুড়ে আসবে ফুটফুটে রাজকন্যা।
যখন তোমার মেসেজ দেখছি; পাশে বসে আছে আমার সদ্য বিবাহিত স্বামী তানজিল। বিয়ের পূর্বে তাকে দেখিনি আমি। গতকাল যখন আমাকে দেখতে এসেছিল; মেহমান বাড়িতে রেখেই হার্ট অ্যাটাকে পরপারে পাড়ি জমান বাবা। তিনি যাওয়ার আগে চোখের পানি ছেড়ে বলে গেলেন, আমি যেন তানজিলকে ফিরিয়ে না দিই।
তুমি কি জানো? আমার ভাগ্য কতটা নির্মম, নির্দয় আর নিষ্ঠুর? আমার বিশ্বাসকে সত্যি করে আজই তুমি এলে কিন্তু আমি ছুটে যেতে পারছি না তোমার বুকে। তুমি কি বলতে পারো? মৃত বাবাকে দেওয়া কথা আর সদ্য বিবাহিত স্বামীকে রেখে কী করে তোমার বুকে ছুটে আসি?