৪ঠা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

রাজনীতিতে বাড়ছে মতপার্থক্য

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে বা রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে। এর ভিত্তিতে সারা দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হচ্ছে। অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বা জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করছে। কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, এমনকি উপদেষ্টা পরিষদও পুনর্গঠনের দাবি করছে কেউ কেউ। সব মিলিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি বা দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের সুর জোরদার হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও নানা ধরনের আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উভয়েই জাতীয় স্বার্থে ‘ঐক্যের’ আহবান জানিয়েছেন এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এক থাকার কথা বলেছেন। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনাসভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানে দলের দুই শীর্ষ নেতা জাতীয় ঐক্যের এই আহবান জানান। এর মাধ্যমে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি শুরু করল বিএনপি।
খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবন থেকে এবং তারেক রহমান লন্ডন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে। বীরের এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যাতে বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে।’ জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চিন্তা-ভাবনা করে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই উত্তম প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে।’ বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় এবং ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে এই ব্যবস্থা কতটুকু উপযোগী, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার জন্য তিনি সবার কাছে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নিত্যনতুন বিষয় যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে থাকি, এর সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে।’ অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ভোট ডাকাতির সুযোগ থাকবে না বলেই কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে ভয় পায়।’ এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নেই। আমাদের ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি চলছে।’ গত মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হলেও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রত্যাশা ছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। জাতির সেই প্রত্যাশা যেন কোনোভাবেই আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, রাজনীতিবিদ, অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা দেখতে হবে। আমরাও মনে করি, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়