প্রতিদিনের ডেস্ক॥
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন। তখন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীদের মনে জেগে ওঠে নতুন আশা, এবার তাদের প্রিয় নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে ফিরবেন। প্রায় এক বছর হতে চললেও সেই প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন ঘটেনি। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কবে? কোন তারিখে? তারেক রহমান ঠিক কোন দিন দেশে ফিরছেন, সে বিষয়ে বিএনপির নেতারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তারাও ঘুরে ফিরে বারবার একই কথা বলছেন, শিগগিরই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। এক বছর পরেও অপেক্ষা, এবার কি ফিরছেন তারেক রহমান? গত ৩০ জুন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি খুব শিগগিরই দেশে ফিরব। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যেটুকু ত্যাগ দরকার, আমি তা করতে প্রস্তুত।’ এই ঘোষণার পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি আসার ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী। তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময়সূচি হিসেবে চারটি দিন আলোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম দিন হচ্ছে আগামী ২৮ জুলাই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তির ঠিক এক সপ্তাহ আগে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন। দ্বিতীয় দিনটি হচ্ছে ৫ আগস্ট। দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের এই দিনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই দিনে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তৃতীয় দিনটি হতে পারে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে। তখন দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান। চতুর্থ দিনটি হতে পারে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বা পরে। তারেক রহমান তখন বীরের বেশে দেশে ফিরতে পারেন। দেশে ফিরলে তারেক রহমান থাকবেন কোথায় এ নিয়েও কথা হচ্ছে। চারটি বাড়ির যেকোনো একটিতে তিনি থাকতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। চারটি বাড়ির মধ্যে গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়ি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। বাড়ির ভেতরে-বাইরে রং করাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ চলছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার নামে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাসা এবং ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল হোসেন সড়কে একটি বাসা বরাদ্দ দিয়েছিল রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সরকার। ১৯৬ নম্বরের বাসাটি এত বছর নামজারি করা ছিল না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেয়। বাড়িটিতে আগে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ভাড়া থাকতেন। ছয় মাস আগে তিনি বাড়িটি ছেড়ে দেন। এরপরই তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদিকে ঢাকা সেনানিবাসের বাসাটির বরাদ্দ বিগত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাতিল করা হয়। এরপর খালেদা জিয়া গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় ওঠেন। এই বাসার সঙ্গে ১৯৬ নম্বরের বাসাটি। এই বাসাতেও মায়ের সঙ্গে থাকতে পারেন তারেক রহমান। বারিধারা ডিওএইচএস ও ধানমণ্ডিতে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের পৈতৃক নিবাস। তারেক রহমান সেখানেও থাকতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের আগস্টে বলেন, ‘তারেক রহমান আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দেশে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব দেবেন। আমরা তার প্রত্যাবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং আশা করছি শিগগিরই তিনি দেশে আসবেন।’ গত ১০ জুন গুলশানে একই বক্তব্যে মির্জা ফখরুল যোগ করেন, ‘তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গত ২৬ জুন ঢাকায় ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। আমরা শুধু দলের মধ্যে নয়, জাতীয় পর্যায়েও প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ এরপর ৫ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ নিয়ে প্রচারিত তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। তবে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু না হলে দেশে ফিরবেন না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। দেশে ফিরতে আইনগত বা রাজনৈতিক কোনো বাধা নেই। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উনার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া, সময় ঠিক করা। কারণ এত বছর বিদেশে থাকার সুবিধা-অসুবিধা, পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিষয় আছে, যা উনি ভালোভাবে বুঝবেন। আমি বলতে পারি, উনি আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেদিন তিনি দিন ডিক্লেয়ার করবেন সবাই জানবেন।’ তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘শঙ্কার কথা না থাকলেও তারেক রহমানের মতো লেভেলের নেতার নিরাপত্তা বিষয়ে বিবেচনা রাখা স্বাভাবিক। উনি ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন চালিয়েছেন।’ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তারেক রহমান। তখন থেকেই সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সব মামলা থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এই মুহূর্তে তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সম্প্রতি বলেছেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বিধিবদ্ধ বাধা নেই।’