ঝিনাইদহ সংবাদদাতা
অবশেষে ঝিনাইদহের বহুল আলোচিত ডা. ফয়জুন নেসার (রুনু) ডেন্টাল রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডেন্টাল কাউন্সিল প্রবিধানমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল রেজিস্টার থেকে নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী তিন বছরের জন্য তার ডা. ফয়জুন নেসা বাংলাদেশের কোথাও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় বা চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন না। ১ জুলাই এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ৯ জুলাই প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে ডা. ফয়জুন নেসা (রুনু) ঝিনাইদহের অন্ততরা খাতুন নামের এক প্রসূতি মায়ের চিকিৎসাকার্যে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সূত্র জানায়, ডা. ফয়জুন নেসা (রুনু) জেলার আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠা ক্লিনিক বেসরকারি হাসপাতালে সিজার অপারেশনসহ নানা জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। সিজার অপারেশনের সময় বেশ কয়েকজন প্রসূতি মায়ের আকাল মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই সড়কের ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা মোছা. আছমা খাতুনের মেয়ে মোছা. অন্তরা খাতুনকে স্থানীয় হামদ এলাকার আল-আমিন প্রাইভেট ক্লিনিকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ভর্তি করে। ডাক্তার ডা. ফয়জুন নেসা ( রুনুর) অন্তরা খাতুনের সিজার অপারেশন করে। একটি মেয়ে সন্তানের মা হন অন্তরা। কিন্তু সিজারিয়ান সেকশনের সময় প্লাসেন্টার (গর্ভফুল) জরায়ুতে থেকে যায়। এ অবস্থায় কথিত ডাক্তার ডা. ফয়জুন নেসা যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করতে পারেননি। এমনকি মুমূর্ষু ওই রোগীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রেফারও করেননি। এরপর যশোর কুনাইন্স হাসপাতালের ভর্তি করে ডাক্তার নার্গিস আক্তার ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করে প্লাসেন্টার বের করেন। এ ঘটনায় অন্তরা খাতুনের মা আছমা খাতুন ঝিনাইদহের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রারাণী দেবনাথের কাছে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সিভিল সার্জন তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটির গঠন করেন এবং ২০২৪ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। সংশ্লিষ্ট (মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সূত্র জানায়, প্রতিবেদন পাওয়ার পরে ২৪ এপ্রিল মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে শৃঙ্খলা কমিটির সম্মুখে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় বিচারপ্রার্থী আছমাসহ অভিযুক্ত ডা. ফয়জুন নেসাকে ডাকা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে শৃঙ্খলা কমিটি ডা. ফয়জুন নেসার রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ আগামী তিন বছরের জন্য তার ডা. ফয়জুন নেসা বাংলাদেশের কোথাও চিকিৎসা হিসাবে পরিচয় বা চিকিৎসা প্রদান করতে পারবেন না বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এদিকে শুক্রবার (১১ জুলাই) জেলা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় ডা. ফয়জুন নেসা ( রুনু) এমবিবিএস (ডিইউ) পিজিডি গাইনি অ্যান্ড অবস, সিসিসি (বারডেম) সিসিএমইউ (অল্ট্রা) লেখা বিশাল বিশাল সাইন বোর্ড ঝুলছে। শৈলকূপা, হরিণাকুণ্ডু জেলা শহরসহ বিভিন্নস্থানে গজিয়ে উঠা ক্লিনিক বেসরকারি হাসপাতালেও ঝুলছে বড় বড় ডিগ্রিধীর ডাক্তারদের পাশে তার নাম। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যত্রতত্র মানহীন ক্লিনিক বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে অনেকেই রোগীদের প্রতারিত করছে। এ অবস্থার জন্য জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসনকে দায়ী করেন তিনি। অপরদিকে অভিযোগকারী আছমা খাতুন জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য খুশি হয়েছি; কিন্তু আমার অর্থনৈতিক ও সন্তানের ক্ষতিপূরণ কে দেবে। এর জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করবেন বলে জানান ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা আছমা। সবশেষ এ রিপোর্ট লেখার সময় মোবাইলে ফোনে জেলার সিভিল সার্জন ডা. কামরুজ্জামান জানান, ঝিনাইদহে প্রাইভেট মেডিকেল থেকে পাশ করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে বেড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডা. ফয়জুন নেসা নামে কোনো ডাক্তারের নাম এর আগে শুনেছি বলে মনে হয় না। ওই ডাক্তারের ডেন্টাল রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে এমন তথ্য জানা নেই। তবে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের পরেও যদি ওই ডাক্তার রোগী দেখে কিংবা ডাক্তার পরিচয় দেন- তবে জেলে যেতে হবে তাকে (ডাক্তার রুনু)।

