১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

লাভজনক সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে দেওয়া হচ্ছে কমিউটার ট্রেন ‘বেতনা’!

সুন্দর সাহা
বেনাপোল-খুলনা-মোংলা ভায়া যশোর রুটে লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলাচলকারী বেনাপোল কমিউটার (বেতনা) ট্রেন বেসরকারি খাতে দেওয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এতে আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লিজ দিতে রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা উঠেপড়ে লেগেছেন বল জানা গেছে। রেলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দিতে গত ২২ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৯ মে দরপত্র খোলা হয়। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যাচাই-বাছাই শেষে রেলের মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠানো হয়। মূল্যায়ন কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। তিন বছরের জন্য লিজ দেওয়া হচ্ছে এই রুটের ট্রেনটি। ‘নীতিমালা মেনেই ট্রেন বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়। লোকসানের কারণে অনেক সময় বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়। কোনো কোম্পানি যদি শেষ ছয় মাসের আয়ের চেয়ে বেশি টাকা দিতে চায়, তাহলে তাদের অনুকূলে লিজ দেওয়া যেতে পারে।’ তবে রেলের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘এইচ অ্যান্ড এম কোং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনো আন্দোলন না হয়, সে কারণে সম্পূর্ণ গোপনে এটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সাল থেকে দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোল-খুলনা-মোংলা ভায়া যশোর যাত্রীবাহী কমিউটার ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৯ সালের ২৩ নভেম্বর এই রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করা হয়, যা প্রায় ১১ বছর (২০১০ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত) সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এরপর ট্রেনটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটের কমিউটার বেতনা ট্রেনটি বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। দরপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে মূল্যায়ন শাখায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রশাসনিক শাখায় এখনো আসেনি। এরপর কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে সর্বোচ্চ দরপত্রদাতাকে কাজ দেওয়া হবে।’ প্রথমে বেসরকারি কোম্পানি ‘মেসার্স বান্না এন্টারপ্রাইজ’ ও পরে ‘ইসলাম শিপ বিল্ডার্স’ চুক্তিবদ্ধ হয়ে ট্রেনটি পরিচালনা করে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাত্রীসেবার মান নিম্নমুখী হওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে আবার সরকারি তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা হয় ট্রেনটি। লাভজনক ও যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে এই রুটে দিনে দুবার যাত্রীবাহী কমিউটার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রতিদিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে দৌলতপুর, নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া, যশোর, ঝিকরগাছা, নাভারণ স্টেশন পার হয়ে সাড়ে ৮টায় বেনাপোল পৌঁছায়। এসব স্টেশন থেকে ওঠা বেশিরভাগ যাত্রী ভারতে যান। পরে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বেনাপোল স্টেশন ত্যাগ করে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে খুলনা পাশে মোহাম্মদনগর পৌঁছায় ট্রেনটি। এই ট্রেন আবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে মোংলা পৌঁছায়। মোংলা স্টেশন থেকে ছাড়ে দুপুর ১টায়। বেনাপোলে পৌঁছায় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে। বিকেল ৫টায় খুলনার উদ্দেশ্যে বেনাপোল ত্যাগ করে কমিউটার বেতনা ট্রেনটি। রেলওয়ের সূত্রমতে, স্থলপথে ভারত যাতায়াতের জন্য দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল। দেশের অন্যান্য স্থান ছাড়াও খুলনা-যশোর অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক যাত্রী এই পথে ভারত-বাংলাদেশ আসা-যাওয়া করেন। অনেক সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী মোংলা, খুলনা, যশোরসহ মধ্যবর্তী শহরগুলোতে যাতায়াত করেন এই ট্রেনে চেপে। ভাড়া বেনাপোল থেকে যশোর ২০ টাকা, খুলনা ৪৫, মোহাম্মদনগর ৫০ এবং মোংলার ভাড়া ৮৫ টাকা। এসব কারণে দিন দিন কমিউটার বেতনা ট্রেনটিতে যাত্রী বাড়ছে। সূত্র বলছে, আগের তুলনায় কমিউটার ট্রেন বেতনা থেকে সরকারি কোষাগারে বেশি টাকা জমা হচ্ছে। বর্তমানে গড়ে প্রতি মাসে এ ট্রেন থেকে ৩৫ লাখ টাকা টাকা আয় করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ কারণে লাভজনক এই ট্রেনটির প্রতি নজর পড়েছে সুযোগ সন্ধানীদের। ট্রেনটি বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে পাকশীতে কর্মরত রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিহির কুমার গুহ জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘নীতিমালা মেনেই ট্রেন বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়। লোকসানের কারণে অনেক সময় বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়। কোনো কোম্পানি যদি শেষ ছয় মাসের আয়ের চেয়ে বেশি টাকা দিতে চায়, তাহলে তাদের অনুকূলে লিজ দেওয়া যেতে পারে।’ বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা যেভাবে জেনেছেন আমিও ওইভাবে জেনেছি। তবে লিজ দেওয়া হয়েছে কি-না আমি জানি না। এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমি হাতে পাইনি।’ তবে টেন্ডার পাওয়া এইচ অ্যান্ড এম কোম্পানির মালিক হুমায়ন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কাজ পেয়েছি। জুলাই মাসের প্রথমার্ধে আমাদের দায়িত্বে এ রুটটি চলার কথা ছিল। তবে বাজেটসহ অন্যান্য কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এ মাসের মধ্যে না হলেও আগামী মাসের প্রথম দিকে বেসরকারিভাবে আমাদের দায়িত্বে এই রুটে ট্রেন চলাচল করবে।’ জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে ভবনের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বেনাপোল-খুলনা-মোংলা রুটের কমিউটার বেতনা ট্রেনটি বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। দরপত্র‘গুলো যাচাই-বাছাই করে মূল্যায়ন শাখায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রশাসনিক শাখায় এখনো আসেনি। এরপর কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে সর্বোচ্চ দরপত্রদাতাকে কাজ দেওয়া হবে।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়