১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

জীবাণুভর্তি ‘গাম ওয়াল’

প্রতিদিনের ডেস্ক
পর্যটন মানেই প্রকৃতির রূপ বা স্থাপত্যের ইতিহাস, এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সিয়াটল শহরের এক অদ্ভুত স্থান। পরিচ্ছন্নতার ধারেকাছেও নয়, বরং জীবাণুতে ঠাসা এক দেয়ালই এখানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ওই দেওয়ালের নাম ‘গাম ওয়াল’। যেখানে লেগে আছে হাজার হাজার রংবেরঙের চুইংগাম। সিয়াটলের বিখ্যাত পাইক প্লেস মার্কেটের কাছেই অবস্থিত এই ‘গাম ওয়াল’। প্রায় আট ফুট উঁচু ও ৫৪ ফুট লম্বা এই দেয়াল আজ এক জীবন্ত ইতিহাস। অথচ নব্বইয়ের দশকে এ ছিল ঝকঝকে একটি স্থান, যেখানে ছিল একটি ছোট বক্স অফিস, যেখানে স্থানীয়ভাবে কমেডি শো ও ছোট অনুষ্ঠান হতো। ১৯৯১ সালে একটি প্রযোজনা সংস্থা বক্স অফিসটি কিনে নেওয়ার পরই শুরু হয় ‘গাম ওয়াল’-এর অদ্ভুত যাত্রা। তখনকার কিছু শিল্পী দেয়ালে চুইংগাম লাগাতে শুরু করেন নিছক মজা করে। কেউ কেউ চুইংগামের সঙ্গে কয়েনও লাগিয়ে দিতেন। ধীরে ধীরে দর্শনার্থীরাও সেই ‘ট্রেন্ডে’ যোগ দেন। দুই বন্ধুর লাগানো চুইংগাম পরিণত হয় হাজারো মানুষের অনুকরণে। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠে চুইংগামের এক পুরু স্তর। আর রঙে রঙে হয়ে ওঠে এক নতুন পর্যটন কেন্দ্র। এই অদ্ভুত ‘আকর্ষণ’ অবশ্য কেবল চোখের খোরাকই নয়। সমস্যাও সৃষ্টি করেছিল স্থানীয়দের কাছেও। দোকানদারদের অভিযোগ, চুইংগামের গন্ধ ও আঠালো অবস্থার কারণে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে যায়। এমনকি আশেপাশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন চুইংগাম লেগে থাকার কারণে দেওয়ালের ইট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দেয়। দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে দেওয়াল পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয় সিয়াটল কর্তৃপক্ষ। স্টিম মেশিনে ১৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে চুইংগাম তুলে ফেলা হয়। এই কাজে সময় লাগে ১৩০ ঘণ্টা এবং তোলা হয় প্রায় ১ হাজার ০৭০ কেজি চুইংগাম। ২০১৮ ও ২০২৪ সালে ফের পরিষ্কার করা হলেও চুইংগাম লাগানো বন্ধ হয়নি। এই ‘জীবাণুর দেওয়াল’-এর সামনে বিয়ের আগে ফোটোশুট করেন বর-কণে, আবার প্রেমিক-প্রেমিকার রোম্যান্টিক মুহূর্ত জমা থাকে সেখানে। এমনকি এক শিল্পী চুইংগাম দিয়েই ফুটিয়ে তোলেন আমেরিকার বিখ্যাত ফুটবল কোচ পিটার ক্লে ক্যারলের ছবি। বলা হয়, পিটার দিনে প্রায় ১৩০টি চুইংগাম চিবোতেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক শিল্পী ২০০টিরও বেশি চুইংগাম দিয়ে বানিয়েছেন তার প্রতিকৃতি। জীবাণু আর গন্ধে ভরা এই দেয়াল হয়তো অনেকের কাছে অস্বস্তির, তবে এটি অদ্ভুত এক ইতিহাস। -সূত্র : আনন্দবাজার

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়