১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

কর্মহীন নারীরা ভিড় জমাচ্ছে সীমান্ত শহর বেনাপোলে

আনিছুর রহমান, বেনাপোল
নদী ভাংগন, খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,এর কারনে অসহায় ও স্বামী পরিত্যাক্তা কর্মহীন নারীরা ভিড় জমাচ্ছে সীমান্ত শহর বেনাপোল চেকপোষ্টে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দুর দুরান্ত থেকে আসা এসব নারীদের চোখে পড়ে। এরা পরিবার পরিজনের দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন যোগাতে চেকপোষ্ট এলাকায় ভিড় জমায়। এখানে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের নিকট থেকে তারা কিছু পণ্য ক্রয় করে বেনাপোল বাজার যশোর খুলনা সহ অন্যান্য জায়গায় বিক্রি করে সংসার চালায়। বেনাপোল চেকপোষ্টে সকাল থেকে আসা নারীদের সাথে কথা প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা কহিনুর বেগম বলেন, আমি আমার গ্রাম থেকে চলে এসেছি নদী ভাংগন এর জন্য। আমাদের ভিটে মাটি কিছু নেই। স্বামী নেই । দুই মেয়েকে নিয়ে কাজের সন্ধানে বেনাপোল এসে একটি ঘর ভাড়া করি। এরপর কাজ না পেয়ে পাশের একজন মহিলার সহযোগিতায় বেনাপোল চেকপোষ্ট এসে ভারত থেকে আসা বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে যেখানে যে রকম সুযোগ হয় তাই বিক্রি করে যা রোজগার হয় তাই নিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে চলি। ঝিনাইদাহ থেকে আসা রহিমা বলেন, তার স্বামী আরও একটি বিয়ে করার পর তাকে দেখে না। এরপর সে বেনাপোল এসে ঘর ভাড়া করে চেকপোষ্ট এলাকায় পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থকে কম্বল খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে জীবন জিবীকা নির্বাহ করি। নড়াইল থেকে আসা সালেহা বেগম জানায় তার স্বামী তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর মা বাবার সংসার ও খুব অভাব অনটনের মধ্যে চলে। বাধ্য হয়ে তার নাবালক এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বেনাপোল পাড়ি জমাই। এরপর ভাল কোন কাজ না পেয়ে অন্য আরো ১০ জন নারীর মত সে এখানে জীবিকা নির্বাহের জন্য ভারত থেকে আসা বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চালাই বলে জানান। খুলনা থেকে আসা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক এক তরুনী বলেন, খুলনা থেকে আয়ের উৎস হিসাবে বেনাপোলে প্রতিদিন সকালে ট্রেন যোগে আসি। এবং এখান থেকে কম্বল সহ কিছু খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে খুলনায় নিয়ে বিক্রি করে সংসার চালাই। সব থেকে বড় সমস্যা হলো এসব পণ্য ক্রয় করে ট্রেনে বাসে খুলনা যেতে গেলে পদে পদে চেক করে। মাঝে মধ্যে বিজিবির চেকে নিয়েও যায়। আবার অনেক সময় অনুরোধ করার পরও কিছু বিজিবি দয়া মায়ার খাতিরে ছেড়ে ও দেয়। এভাবে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছি। প্রতিদিন বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্টে এমন করে নারীরা দাঁড়িয়ে থাকলে দেশের সন্মান ও নষ্ট হয়। কারন এটা রাষ্ট্রের প্রধান ফটক। এ পথে প্রতিদিন দেশী বিদেশী পর্যটক ভারত বাংলাদেশ আসা যাওয়া করে। আর সেই প্রবেশ মুখে দারিদ্রতার ছাপ নিয়ে দাড়িয়ে থাকে অসহায় শতাধিক নারী। এলাকার সচতেন মহল বলেন, এসব অসহায় নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সরকারী ভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। নইলে এদের মানবতার জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যাৎ ও রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। এদের কর্মসংস্থান এর প্রয়োজন। যে সকল নারীরা বেনাপোল চেকপোষ্টে পাসপোর্ট যাত্রীদের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করার উদ্দেশ্য আসে তাদের সকলের বয়স ২০ থেকে ৪০ এর মধ্যে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়