১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

যশোর সদর হাসপাতালে এইচআইভি রোগীদের ওষুধ চুরি: তদন্ত রিপোর্ট প্রদানে ‘গড়িমসি’

তারিক হাসান বিপুল
যশোর সদর হাসপাতালে এইচআইভি রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সংবেদনশীল ওষুধ চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনও কোনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। এতে করে স্থানীয় সুধী সমাজ, স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই দুপুরে হাসপাতালের মাঠপর্যায়ের কয়েকজন কর্মী যখন ১২ কার্টন এইচআইভি প্রজেক্টের লুব্রিকেন্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এসব ওষুধ পাচার হচ্ছিল হাসপাতালের এক কর্মকর্তা ‘নীল’-এর বাসায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আউটরিচ কর্মকর্তা আবু আলী জাবেদ ও রেক্সোনা বেগমের বিরুদ্ধে।এ ঘটনায় তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক ডা. হুসাইন শাফায়েত তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন, যার মধ্যে ছিলেন আরএমও ডা. বজলুর রশিদ টুলু, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শরিফুল ইসলাম ও ওয়ার্ড মাস্টার ওবায়দুল ইসলাম। কমিটিকে ছয় কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দশদিন অতিবাহিত হলেও এখনও সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সুধী মহলের একাংশ মনে করছেন, অন্যান্য ঘটনার মত এই ঘটনাও হয়তো ‘ডিপ ফ্রিজে’ চলে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হাসপাতাল কর্মী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ একটি চক্র এই ওষুধ পাচারের সঙ্গে জড়িত। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বদলির হুমকি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পান। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এইচআইভি আক্রান্তদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ চুরি করে খোলা বাজারে বিক্রি করা শুধু বেআইনি নয়, এটি একটি জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রশাসনের উচিত দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা। তারা আরও বলেন, প্রতিবার একটি ঘটনা ঘটে, তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু রিপোর্ট আর প্রকাশ পায় না। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ আশাভঙ্গের শিকার হবে এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাওয়ার অধিকারই একসময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির লাগাম টানতে হলে এ ধরনের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। প্রশ্ন উঠেছে, জনগণের টাকায় কেনা ওষুধ যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কাদের জন্য?

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়