জনকল্যাণে সরকার নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা করে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় শত শত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বছর শেষে দেখা যায় এডিপি বাস্তবায়নের হার থাকে খুবই কম। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বাড়ে। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এডিপি বাস্তবায়নের গতি ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। এর কিছু কারণও ছিল। অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়েই শুরু হয় ব্যাপক জনবিক্ষোভ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগস্টে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। তা ছাড়া বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক ঠিকাদার প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে যান। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্প যাচাই-বাছাই ও অপ্রয়োজনীয় খাতগুলোতে অর্থছাড় বন্ধ বা সীমিত করে দেয়। এতেও উন্নয়ন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে শ্লথ হয়ে পড়ে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এক হাজার ৪৬৮টি প্রকল্প ছিল এডিপির আওতায়। এসব প্রকল্পের জন্য সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ পুরো বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশের মতো অর্থ খরচই হয়নি। অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও দেখা গেছে ব্যয় কমে যাওয়ার প্রবণতা। এ মাসে খরচ হয়েছে ৪২ হাজার ৪৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা সংশোধিত বরাদ্দের মাত্র ১৮.৭৭ শতাংশ। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে জুন মাসে খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার ৭৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা ছিল বরাদ্দের ২৩.০৯ শতাংশ। অর্থাৎ মাসিক হিসাবেও ব্যয় কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এই অর্থবছরে সবচেয়ে বড় ধস হয়েছে বিদেশি সহায়তানির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে। সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণ ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু বছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ৬৫.৫৩ শতাংশ। এই হারও ইতিহাসে সর্বনিম্ন। বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বাজেট বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পরিকল্পনা, দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা, এই তিনের সমন্বয় না হলে এডিপি বার্ষিক টার্গেটের নিচেই থেকে যাবে। আমরা মনে করি, প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো, দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর জবাবদিহির আওতায় আনাই হতে পারে ভবিষ্যতের বাস্তবায়ন সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

