১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

যশোর শংকরপুরে পুলিশের নাকের ডগায় মাদকের কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের শংকরপুর ও বাস টার্মিনাল এলাকা এখন কার্যত মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও, চিহ্নিত মাদক কারবারিরা কোনো তোয়াক্কা না করে দিব্যি তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে,তারা পুলিশের কতিপয় সদস্যকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও নানা অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যশোর চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের ছত্রছায়ায় এই চক্রগুলো দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। স্থানীয়ভাবে ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত শংকরপুর বটতলা এলাকার জাহাঙ্গীর এই পুরো মাদক নেটওয়ার্কের মূলহোতা। অভিযোগ আছে,সে আন্তঃজেলা মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় তার নিয়ন্ত্রিত মাদক সরবরাহ ও খুচরা বিক্রির জন্য ৫ থেকে ৭ জনের একটি ডেলিভারি টিম সক্রিয় রয়েছে। এই দলে রয়েছে চোর রোস্তমের ছেলে রিপন, বাঁতেন, মুনজিলের ছেলে আলামিন এবং আলাউদ্দিন আলার অপর ছেলে রাজা ওরফে ‘বাবা রাজা’। ‘বাবা রাজা’-এর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে শংকরপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় কিশোর গ্যাং। ছিনতাই, চাঁদাবাজি,মাদক পরিবহন ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিই এদের মূল কাজ। স্থানীয় সূত্র জানায়,গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা অন্তত ৪০/৫০ জন। এই চক্রে রয়েছে জালালের ছেলে ইয়াছিন,বিপ্লব, রিপন,বাদশা, সুজন ইমরান, সজিবসহ আরও অনেকে। এমনকি কিছু আন্তঃজেলা বাসের হেলপাররাও এই চক্রের সহযোগী। এদের কেউ ইয়াবা বিক্রির দায়িত্বে,কেউ ফেনসিডিল সরবরাহে।‘ইয়াবা সুজন’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তি শংকরপুর, বটতলা মসজিদ, মেডিকেল কলেজ এলাকা, ছোটনের মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বিক্রি ও ডেলিভারির দায়িত্বে রয়েছে। ফেনসিডিল বিক্রেতা হিসেবে ‘ইমরান’ নামের একজনের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। এই পুরো মাদক চক্রটির পেছনে আছে জাহাঙ্গীরের প্রভাব। স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকার সুবাদে প্রশাসনের নাকের ডগায় দাঁড়িয়েও সে অবাধে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, সিরাজুল ইসলামের চায়ের দোকানের পেছনে তার নেতৃত্বে বসে ‘মাদক হাট’। অপর একটি ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে,শহরের যশোর কলেজপাড়ায় প্রবাসী নারী শাহনাজের বাড়ি তালা ভেঙে দখল করে নেয় জাহাঙ্গীর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এমনকি তাকে নারী পাচার মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগও উঠেছে। প্রথমে ২০ হাজার,পরে আরও ৫০ হাজার টাকা জোর করে আদায় করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
এসব বিষয়ে যশোর চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের একাংশের নিরব সমর্থনেই এই চক্র দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, যশোর শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রকাশ্য মাদক বেচাকেনা আর কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাস চলতে পারে, এটা কিভাবে সম্ভব? সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অনতিবিলম্বে এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান এবং প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এসব মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কৌশলে আবার তারা জামিনে এসে মাদক ব্যবসা করছে আমাদের কাছে খবর পুলিশ দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়